ভাঙা ঘরই একমাত্র সম্বল, বৃষ্টি ফেরাতে বৃদ্ধার বিছানায় পলিথিনের মশারি

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা হলেও অভাবের কবলে পড়ে কেউ কেউ এ চাহিদা মেটাতে পারছেন না। খাবারের জোগাড় হোক বা না হোক রাতে ঘুমটা চাই আরামের। অথচ দুবেলা অন্ন জোগাড় করতে পারলেও বাসস্থানের অভাবে নিরাপত্তাহীনভাবে বাস করছে এক বৃদ্ধা। ভাঙা ঘর ওই বৃদ্ধার একমাত্র সম্বল।পুরো ঘরটিই যেন খোলা আকাশের নিচের অন্যরকম এক প্রতিচ্ছবি। ভাঙা চাল বেধ করে রোদ আর বৃষ্টি অনায়েসেই ঢুকতে পারে ঘরের ভেতর। নিরাপত্তা দুরের কথা। ঘরটি যেন বসবাসের অযোগ্য। এমন ঘরেই থাকছেন ৭০ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধা।

ভাঙা চালের বৃষ্টি ফেরাতে পলেথিনের মশারি টাঙিয়ে ওই বৃদ্ধা রাত পাড় করছেন। পুরো ঘরে বৃষ্টি পড়লেও ঘুমানোর জায়গাটিতে বৃষ্টি ফেরানোর সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন তিনি। এমন চিত্র দেখা মিলল টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের মাইঠান গ্রামে।ভুক্তভোগী রাহেলা খাতুন ওই গ্রামের মৃত জয়েদ আলীর স্ত্রী। ঘরহীন এমন অমনবিক জীবনযাপন স্থানীয় প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারমম্যান বা ইউপি সদস্যদের নজরে পড়েনি । তবে সহজেই স্থানীয় সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে বৃদ্ধের এমন মানবিক জীবন।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, একটি ভাঙা ঘরে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন বিধবা রাহেলা খাতুন। যা বাসযোগ্য নয়। কোথায় গেলে তার একটি ঘরের ব্যবস্থা হবে সেটাও অজানা ওই বৃদ্ধের।রাহেলা খাতুন জানান, ১৯৭১ সালে তার স্বামী জয়েদ আলী মারা যান। দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে মেয়ে হাসনা-জবেদা উভয়েরই বিয়ে হয়ে যায়। ছোট ছেলে আমীর হোসেন বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় বাড়িতে রয়েছে আরেক ছেলে আব্দুস সামাদ। বড় ছেলে সামাদ দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকার পর এবার বাড়ির সামনেই দিয়েছে চায়ের দোকান। চায়ের দোকানের সামান্য উপার্জনে এক মেয়ে নিয়ে নিজের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন তিনি। মাকে সহযোগিতা করার মতো ইচ্ছে বা সুযোগ কোনটাই নেই সামাদের।

অন্যের বাড়ি কাজ করে উপার্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন সামাদের বৃদ্ধা মা রাহেলা বেগম। সামান্য উপার্জনে পেট চালানো কষ্টকর। ঘর বানানোর টাকা পাবে কিভাবে? নিরুপায় হয়েই তিনি এই ভাঙা ঘরে বৃষ্টি ফেরাতে পলেথিন মশারি টাঙিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বয়স্ক ভাতা পেলেও ওই টাকা একটি ঘরে জন্য যথেষ্ট না।স্থানীয় প্রসাশন, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার থাকার জন্য একটি ঘর দাবী করেন রাহেলা খাতুন। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারীভাবে ঘরের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

স্থানীয় পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (১নং দেউলী ইউনিয়ন) পাশ্ববর্তী চকতৈল গ্রামের খন্দকার মোশারফ বাপ্পী বলেন, আমি প্রতিদিন ওই বৃদ্ধের বাড়ির সামনে দিয়ে অফিসে যাই। হঠাৎ তার ঘরটি নজরে পড়ে। এ ব্যাপারে আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি। আমার পরিচিতদের কাছে সহযোগিতাও চেয়েছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে ওই বিধবা বৃদ্ধের জন্য একটি ঘর নির্মান করা সম্ভব।

উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার (ইউপি সদস্য) মান্নান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন আমি বিষয়টি জেনেছি। তার বাড়ি পরিদর্শন করেছি। আসলে ওই বৃদ্ধা ঘর প্রাপ্য। রোববার কর্মদিবসে আমি উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও ও পিআইওকে বিষয়টা জানাবো। তাদের সহযোগিতায় একটি ঘরের ব্যবস্থা করতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।দেউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম (সাচ্চু) বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। রাহেলা খাতুনের জন্য একটি ঘর পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।