জামায়াতকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই

মাহবুবউল আলম হানিফ। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য। চলমান রাজনীতি, বিদেশি তৎপরতা, জামায়াত প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: শতকরা ৭০ শতাংশ জনসমর্থন আওয়ামী লীগের আছে বলে আগের পর্বে উল্লেখ করেছেন। এত বিশাল সমর্থন নিয়েও শেখ হাসিনার সরকার নিরপেক্ষ ভোট দিতে ভয় পায় বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এই ভয়ের কারণেই আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে চাইছেন না।

মাহবুবউল আলম হানিফ: আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছি। আবার কেন প্রতিষ্ঠা দেবো?
জাগো নিউজ: আপনারাই আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিলেন?
মাহবুবউল আলম হানিফ: তখন প্রয়োজন ছিল। এখন তো প্রয়োজন নেই।

জাগো নিউজ: প্রয়োজন মনে করেই আন্দোলন করছে বিরোধীজোট…
আরও পড়ুন>>> কর্মসূচি নিয়ে ‘সাপলুডু’ খেলায় বিএনপি-জামায়াত
মাহবুবউল আলম হানিফ: তাদের আন্দোলনে জনসমর্থন নেই।

জাগো নিউজ: আপনাদের প্রতি সমর্থন ৭০ শতাংশ বলছেন। তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেওয়া তো মামুলি বিষয়?

মাহবুবউল আলম হানিফ: আমরা কেন অযৌক্তিক দাবি মানতে যাবো।

জাগো নিউজ: বিএনপি সরকারও আপনাদের দাবি অযৌক্তিক বলেছিল?
মাহবুবউল আলম হানিফ: আমরা তাদের টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে প্রমাণ করেছিলাম, আমাদের দাবি যৌক্তিক ছিল। তারা একতরফা নির্বাচন করে ভেবেছিল ক্ষমতায় থাকবে। পারেনি।

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: টেনেহিঁচড়ে নামানোর পরিস্থিতি যদি ফের দাঁড়ায়?

মাহবুবউল আলম হানিফ: এটি পারলে অনেক আগেই সরকারের পতন হতো। মনে রাখতে হবে এটি শেখ হাসিনার সরকার, জনগণের সরকার।

জাগো নিউজ: এই ভরসা কি শুধুই জনগণ?

বিজ্ঞাপন

মাহবুবউল আলম হানিফ: অবশ্যই। জনগণই আমাদের ভরসা।

জামায়াতের সৃষ্টি পাকিস্তান থেকে বিএনপির সৃষ্টি আইএসআই থেকে। তারেক রহমান বলেছিলেন ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবির একই মায়ের দুই সন্তান। বিএনপির বহু নেতা বলেন জামায়াত ও বিএনপির আদর্শ একই।

জাগো নিউজ: ২০১৪ সালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এসে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ভরসা দিয়েছিলেন। এমন নজিরও তো আছে?

মাহবুবউল আলম হানিফ: ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এসে কার সঙ্গে মিটিং করছে এতে কিছুই যায় আসে না।
জাগো নিউজ: তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ এত গুরুত্ব পাচ্ছে কেন?

মাহবুবউল আলম হানিফ: ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং কার সঙ্গে মিটিং করেছে, কী বলেছে তা দৃশ্যমান ছিল না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি দৃশ্যমান।

আরও পড়ুন>> সুবিধায় জামায়াত!

বিএনপি সকাল-বিকাল বিভিন্ন দূতাবাসে ধরনা দিচ্ছে। আমরা এসব নিয়ে কোনো কথা বলিনি। জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, আন্দোলনে সফলতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, এটি বিএনপি জানে। তাদের ভরসাই হচ্ছে নানা ষড়যন্ত্র করে সরকার হঠানোর চেষ্টা।

জাগো নিউজ: সেই ষড়যন্ত্রের চেষ্টায় সফল হলে কী ঘটবে সামনে?

মাহবুবউল আলম হানিফ: বিএনপি আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাবে এ ধরনের অবাস্তব কথা আমরা বিশ্বাস করি না। বহু ডেটলাইন দিয়েছিল। ধোপে টেকেনি। বিএনপির আন্দোলনে তরুণ-যুবকেরা নেই। বিএনপি বাংলাদেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়। এর সঙ্গে তো মানুষ থাকতে পারে না। আমরা চাই বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যেতে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা হতাশ হয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।
জাগো নিউজ: রাজনীতিতে এমন বক্তব্য শুনে মানুষ অভ্যস্ত। আপনি নিজেও হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে নেতাকর্মীদের পিঠের চামড়া থাকবে না।

মাহবুবউল আলম হানিফ: আমি কখনই হতাশা প্রকাশ করিনি। আমি বলেছি, দল ভালো না থাকলে অনেকের পিঠের চামড়া থাকবে না। এটি তো স্বাভাবিক ব্যাপার।

জাগো নিউজ: এখন দল ভালো নাকি খারাপ অবস্থায় আছে?

মাহবুবউল আলম হানিফ: অবশ্যই দল ভালো অবস্থায় আছে।

জাগো নিউজ: সামনে?

মাহবুবউল আলম হানিফ: জনগণের সমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও ক্ষমতা গঠন করবে আওয়ামী লীগ।

জাগো নিউজ: কোনো কারণে সরকার গঠন করতে না পারলে?

আরও পড়ুন>> বিএনপির ‘ভুল’ ভাঙার অপেক্ষায় জামায়াত

মাহবুবউল আলম হানিফ: কোনো কারণই নেই।
জাগো নিউজ: ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরেছিল আওয়ামী লীগ। এমন আত্মবিশ্বাস তখনও ছিল।

মাহবুবউল আলম হানিফ: তখন আমরা আন্তর্জাতিক চক্রান্তের কাছে পরাজিত হয়েছিলাম। তখন আমরা বুঝতে পারিনি।

আমরা তাদের টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে প্রমাণ করেছিলাম, আমাদের দাবি যৌক্তিক ছিল। তারা একতরফা নির্বাচন করে ভেবেছিল ক্ষমতায় থাকবে। পারেনি।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের রাজনীতি নানা চক্রান্তের আবহে ঘেরা বলে মনে করা হয়। আবারও যে চক্রান্ত হবে না নিশ্চিত করে বলছেন কেন?

মাহবুবউল আলম হানিফ: ২০০১ সালের চক্রান্তটা বুঝতে দেরি হয়েছে। এর কারণেই আমাদের মাশুল দিতে হয়েছে। এখনকার চক্রান্তটা আমাদের নেত্রী আগেই ধরতে পেরেছেন। এ কারণেই আমরা এই চক্রান্ত মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পারছি।

জাগো নিউজ: এগিয়ে যাওয়ার বিপরীতে থামার রাজনীতিও আছে। থামতেও হতে পারে?

মাহবুবউল আলম হানিফ: থামার কোনা সুযোগ নেই। কোনো ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারো সরকার গঠন করবে।

জাগো নিউজ: ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে যে চিঠি লিখেছে, সেখানে জামায়াত প্রসঙ্গ অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এটি নিয়ে ভাবনার ব্যাপার আছে কি না?

মাহবুবউল আলম হানিফ: আমি এটি নিয়ে খুব ভাবতে চাই না। এদেশে ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান এবং ধর্মভীরু। এ কারণেই হয়তো অনেকে বুঝে অথবা না বুঝে তার প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছে। এর মানে এই নয় যে তারা আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে।

যে দেশের মানুষ এখনো পির-ফকিরের কাছে দোয়া চাইতে যায় সেই দেশে এমন সহানুভূতি নিয়ে ভাবনার কোনো কারণ নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতি খুব পরিষ্কার। যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত পাকিস্তানের আদর্শকে বিশ্বাস করে। জামায়াতকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের সঙ্গে কখনই আপস করবে না।

জাগো নিউজ: এই প্রেতাত্মাদের সংখ্যা বাড়ছে কি না?
মাহবুবউল আলম হানিফ: বাড়তেই পারে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল নৌকার বিপক্ষে। এ সংখ্যা কিছুটা বাড়তেই পারে।

বিএনপি-জামায়াতের ভোটতো নৌকাবিরোধী ভোট থেকেই। জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। জামায়াতের সৃষ্টি পাকিস্তান থেকে বিএনপির সৃষ্টি আইএসআই থেকে। তারেক রহমান বলেছিলেন ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবির একই মায়ের দুই সন্তান। বিএনপির বহু নেতা বলেন জামায়াত ও বিএনপির আদর্শ একই।

জাগো নিউজ: আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল তৈরি হলো না। এর দায় আওয়ামী লীগেরও কি না?

মাহবুবউল আলম হানিফ: দল কেউ তৈরি করে দিতে পারে না। এর দায় আওয়ামী লীগ নেবে কেন? সিপিবি তো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল। জাসদ আছে। তারা জনআস্থা তৈরি করতে পারেনি।

জাগো নিউজ: বামপন্থিদের অভিযোগ আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের সঙ্গে যে আচরণ করে তাদের সঙ্গেও একই আচরণ করে। রাজনীতির মাঠ রুদ্ধ করে রাখছে সবার জন্যই।

মাহবুবউল আলম হানিফ: ব্যর্থ লোকগুলো অন্যের ওপর দোষ সাব্যস্ত করতেই অভ্যস্ত। অযোগ্যরা এভাবেই বলে।

জাগো নিউজ: আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কী বলবেন?

মাহবুবউল আলম হানিফ: নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা অংশ নেবে। নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ পুরো প্রস্তুত।