হাজী সেলিমের পেটে শত মানুষের সম্পত্তি

এখন পর্যন্ত হাজী সেলিমের দ’খলের যে চিত্র পেয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, বাস্তব চিত্র তার চেয়ে আরো অনেক ভ’য়ানক। হাজী সেলিমের অ’বৈধ দ’খলে রয়েছে এমন শত শত বিঘা সম্পত্তির সন্ধান এখনো সংস্থাগুলোর কাছে নেই। তবে অনুসন্ধান চলছে বলে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেছেন। একটি গো’য়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তাও বলেছেন, হাজী সেলিমের অ’বৈধ সম্পত্তির সন্ধানে তারাও তৎপর রয়েছেন। ভু’ক্তভোগীরা অ’ভিযোগ করেন, তাদের সম্পত্তি দ’খল করে নেয়ার পরে তারা আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন; কিন্তু হাজী সেলিমের প্রভাবের কাছে কিছুই টেকেনি।

ইতোমধ্যে যে অ’বৈধ ও জবর দ’খলীয় সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে তা হলো- লালবাগে প্রতিব’ন্ধীদের জমি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দ’খল করে গুলশান আরা সিটি, পুরান ঢাকার মৌলভী বাজারে অগ্রণী ব্যাংকের জমি (যা ইতোমধ্যে উ’দ্ধার করা হয়েছে), কামরাঙ্গীরচরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি, চকবাজারে অন্যের জমি দ’খল করে চান সরদার কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, চকবাজারে নলগোলা সর্দার হার্ডওয়্যারের নামে মার্কেট দ’খল, চকবাজারে বশির মার্কেট দ’খল করে মদিনা আশিক টাওয়ার নির্মাণ, চকবাজারের জাহাজ বাড়ি দ’খল, গ্রিন রোডে জমি দ’খল করে মদিনা গ্রুপের অফিস নির্মাণ, লালবাগে বেঁড়িবাধ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দ’খল করে বহুতল ভবন নির্মাণ ও কালু নগরের জমি। এর বাইরেও নামে- বেনামে হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি তার দ’খলে রয়েছে বলে অ’ভিযোগ আছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মেঘনা শিল্পনগরীর ইসলামপুর এলাকায় হাজী সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান টাইগার সিমেন্ট কারখানায় আবারো স্থানীয় প্রশাসন উ’চ্ছেদ অ’ভিযান চা’লিয়েছে। সোনারগাঁও উপজে’লা নির্বাহী অফিসার মো: আতিকুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আ’দালত পরিচালনা করে অ’বৈধভাবে দ’খলে রাখা প্রায় ১৪ বিঘা খাস জমি উ’দ্ধার করেন। পরে প্রশাসন দ’খল মুক্ত করে স’রকারি সাইনবোর্ড ঝু’লিয়ে দেয়। ইউএনও টাইগার সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ভেতরে দ’খলে রাখা স’রকারি খাস জমি থেকে একটি টিনশেড গোডাউন ও পাথরের স্তূপ অপসারণ করে তা দ’খলমুক্ত করেন। এর আগে গত রোববার বিকেলে টাইগার সিমেন্ট ফ্যাক্টরির দ’খলে রাখা স’রকারি সম্পত্তি উ’দ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসি ল্যান্ড আল মামুন উ’চ্ছেদ অ’ভিযান পরিচালনা করেন।

ওই দিন সময় স্বল্পতার কারণে ও বুলডোজার বিকল হয়ে পড়ায় টাইগার সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ভেতরের অ’বৈধ দ’খলে রাখা সব স্থাপনা উ’চ্ছেদ না করে অ’ভিযান সমাপ্ত করেন। তবে স’রকারি সম্পত্তিতে টাইগার সিমেন্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ যেসব অ’বৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন তা দ’খলমুক্ত করে দিতে তিন দিনের সময় বেঁ’ধে দিয়ে নোটিশ প্রদান করে উপজে’লা প্রশাসন। উপজে’লা প্রশাসনের বেঁ’ধে দেয়া সময়ে দ’খল ছেড়ে না দেয়ায় বৃহস্পতিবার পুনরায় এ উ’চ্ছেদ অ’ভিযান পরিচালনা করা হয়।

জানা গেছে, স’রকারি সম্পত্তি দ’খলের পাশাপাশি হাজী সেলিম ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০ জনের প্রায় পাঁচ বিঘা সম্পত্তি সং’সদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে দ’খলে নিয়ে নেন। এ সম্পত্তি উ’দ্ধারের জন্য গত বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জে’লা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ভু’ক্তভোগী ১০ ব্যক্তি। এ ছাড়াও দেশের প্রভাবশালী শিপইয়ার্ড কোম্পানি আনন্দ শিপইয়ার্ড কোম্পানিরও ১২ শতাংশ জমি দ’খল করে নেন সং’সদ সদস্য হাজী সেলিম।

ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ভু’ক্তভোগী আলী ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, হাজী সেলিম প্রভাব খাটিয়ে তার দুই বিঘা সম্পত্তি দ’খলে নিয়ে নেন। এ বি’ষয়ে একাধিকবার তার মালিকানাধীন টাইগার সিমেন্ট কারখানায় গেলেও আমার জমি ক্রয় করে নেননি হাজী সেলিম। আমি তার বি’রুদ্ধে দু’টি মা’মলাও দা’য়ের করেছি। এ ছাড়াও আরো ৯ জনের জমি দ’খল করেন হাজী সেলিম। এ ছাড়াও ইসলামপুর এলাকায় প্রভাবশালী কামাল হোসেন ওরফে নেতা কামালের দ’খলে থাকা প্রায় তিন বিঘা খাস জমি উ’দ্ধার তৎপরতা চা’লায় প্রশাসন। ইসলামপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় কামাল হোসেনের অ’বৈধভাবে গড়ে তোলা মার্কেট আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই জমিতেও জে’লা প্রশাসকের পক্ষে স’রকারি সম্পত্তি উল্লেখ করে সাইনবোর্ড ঝু’লিয়ে দেয়া হয়। এ সময় অস্থায়ী আওয়ামী লীগ কার্যালয় লেখাসংবলিত একটি সাইনবোর্ড অপসারণ করেন ভ্রাম্যমাণ আ’দালত।

সোনারগাঁও উপজে’লা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, স’রকারি ১৪ বিঘা খাস জমি দ’খলমুক্ত করতে বেঁ’ধে দেয়া তিন দিন সময় শেষ হওয়ার পর পুনরায় অ’ভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ভু’ক্তভোগী কেউ কেউ বলেন, হাজী সেলিম তাদের সম্পত্তি দ’খল করার পর তারা আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন; কিন্তু তাদের কোনো অ’ভিযোগই তখন টেকেনি। তারা আশা করছেন, হাজী সেলিমের দ’খল থেকে তাদের সম্পত্তি উ’দ্ধার করে তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। এ দিকে, দ’খলের ব্যাপারে জানতে হাজী সেলিমের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি।