বাসে আগুন: অবশেষে যা বলছে বিএনপি

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগ করার ঘটনার সঙ্গে বিএনপি কোনোভাবেই জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ভোট ডাকাতি, সন্ত্রাস ও কারচুপি গোপন করতেই পরিকল্পিতভাবে বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করে এ অভিযোগ করেন। বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আপনারা জানেন, আজ জাতীয় সংসদ ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনের দিনে ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে আকস্মিকভাবে কয়েকটি গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও রহস্যজনক এবং একইসঙ্গে উদ্দেশ্যমূলক। এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপিকে জড়িত করে বিভিন্ন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বিএনপি এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ভোট ডাকাতি, সন্ত্রাস, কারচুপি গোপন করতেই পরিকল্পিতভাবে এসব সন্ত্রাসমূলক ঘটনা ঘটিয়ে জনদৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায় সরকার। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। একই কায়দায় আজ এই ঘটনা ঘটিয়ে এর দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর অন্যায়ভাবে চাপিয়ে অতীতের মতোই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করতে চায়। আওয়ামী লীগের ভোট কারচুপির প্রতিবাদে বিএনপির নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে নয়াপল্টনে।

বলা হচ্ছে-এই মিছিল থেকে বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে, যা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। মিছিল বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শেষ হওয়ার মুহূর্তে কে বা কারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আনুমানিক ৪০০ ফিট দূরে আনন্দ ভবনের সামনে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অথচ বলা হচ্ছে, মিছিল থেকে বিএনপির কর্মীরা আগুন দিয়েছে। তাহলে ঢাকা শহরের অন্যান্য স্থানে বাসে আগুন লাগানোর ঘটনা কারা ঘটিয়েছে? প্রকৃত অর্থে ক্ষমতাসীনদের এজেন্টরাই এই ঘটনা ঘটিয়ে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপকৌশল নিয়ে এসব করেছে। যারা ভোট ডাকাতি করেছে, তারাই ষড়যন্ত্র করে এসব কাণ্ড করছে, অতীতেও তারা একই কাজ করেছে। নির্বাচন হলো উত্তরায়, আর গাড়ি জ্বলল দক্ষিণে, এতে বিএনপিকে জড়িত করা হাস্যকর।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বর্তমান সরকারের দমন-নিপীড়ন, গণতন্ত্র হরণ, ভোটাধিকার হরণ, ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা এবং হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যার পরেও গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি শত নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করেও জাতীয় নির্বাচনসহ সব স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অথচ সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ও অনুগত প্রশাসনকে অপব্যবহার করে জোরপূর্বক ধারাবাহিকভাবে জনরায় ছিনতাই করে চলেছে। সরকার যেনতেনভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতেই গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে দিচ্ছে। বিরোধী দলকে কোনো প্রকার স্পেস দেওয়া হচ্ছে না, বরং মিথ্যাচার ও দমন-পীড়নের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য মোটেও শুভ নয়।

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আজ বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং শেষে দলের অফিস থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সারা দিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৫ জন নেতাকর্মীকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আমি এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সাবেক ছাত্রনেতা শহীদুল্লাহ ইমরান, জাসাসের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহদপ্তর সম্পাদক নাজমুল হাসান, কৃষক দলের নেতা শাহজাহান সম্রাট প্রমুখ।