ফেসবুক লাইভে সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলা সেই বাদশা এখন কৃষক

এবার চাকরি না পেয়ে স্নাতকসহ সব একাডেমিক সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলা যুবক বাদশা মিয়া এখন পুরোদমে একজন কৃষক। নীলফামারীর ডিমলার ওই যুবক প্রায় ২০টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পরও চাকরি পাননি। সরকারি চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ার হতাশায় ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক লাইভে’ নিজের শিক্ষাজীবনের সব একাডেমিক সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার ৩০ মে দুপুরে জেলার ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামের ধান ক্ষেতে দেখা হয় বাদশা মিয়ার সঙ্গে। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে তিনি নিজের জমির ধান কেটে কাঁধে নিয়ে বাড়ির উঠানে বয়ে আনছিলেন। তাকে তার প্রবীণ বাবা মাঠের কাজে সহযোগিতা করছিলেন। সামান্য আবাদি জমির ফসল দিয়ে কোনোরকমে দিনযাপন করছেন তারা।

এ সময় প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন জানান, বাদশা মিয়া আমাদের গ্রামের কৃষক মহুবার রহমানের ছেলে। ছয় ভাই-বোনের অভাবের সংসারে বাদশাই সবার বড়। ২০১৪ সালে তিনি নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তবে টাকার অভাবে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি। বাদশা ২০০৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে দাখিল ও ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে আলিম সম্পন্ন করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদশা মিয়া বলেন, ‘আমার বাবা খেয়ে-না খেয়ে আমাকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই-বোনদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। বর্তমান সমাজে সবচেয়ে অসহায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত ছেলেরা। এরা না পারে চাকরি জোটাতে, আবার না পারে অর্থের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়াতে। আমিও অনেককে লুকিয়ে ঢাকা ও বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে উপার্জন করেছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার শ্রমিকদের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জায়গায় কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। সনদ ছিঁড়ে ফেলার পর ‘‘রোজ’’ নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিস আমাকে চাকরি দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে তিন মাস চাকরি করার পর তারা আমাকে এক মাসের বেতন দেয়। ফলে ওই চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি।’

এর আগে ভুক্তভোগী বাদশা সনদ ছিঁড়ে ফেলার ভিডিওতে বলেছিলেন, ‘আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ! কত মানুষ ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়া চাকরি করে খাচ্ছে। আর আমি এত সার্টিফিকেট নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও একটা সরকারি বা বেসরকারি চাকরি জোটাতে পারিনি। সার্টিফিকেট অনুযায়ী চাকরির বয়স শেষ, এখন এগুলো রেখে লাভ কী? বয়স থাকতেই তো চাকরি জোটাতে পারিনি।’

এদিকে বাদশার বাবা মহুবার রহমান বলেন, ‘চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পর থেকে হতাশায় ভুগছিল বাদশা। দিনে দিনে হতাশা বেড়ে যাওয়ায় সে তার সার্টিফিকেটগুলো ছিঁড়ে ফেলে। বর্তমানে আমাদের সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। নিজের মাত্র তিন বিঘা জমি। তিন মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর এখন সঞ্চয় বলতে কিছু নেই। ছোট ছেলে বিএ পড়ছে। সবকিছু মিলে বেকার ছেলে বাদশাকে নিয়ে মাঠে কাজ করছি।’