দেশে থাকেন ৬ মাস, ৭ নম্বর বিয়ে করতে গিয়ে আটক প্রাবসি

বয়স তার ষাটের কোটায়। থাকেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। ছুটিতে একেকবার দেশে আসলে থাকেন ৬ মাস থেকে বছরখানেকও। সংসারে একাধিক স্ত্রী’ থাকলেও এ সময় তার মন করে উড়ু উড়ু। নানা ছলে নারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন।আবার পেশাদার লোকও আছে, যারা নিত্যনতুন রমণীর খবর নিয়ে আসেন তার কাছে। এভাবে যখনই দেশে আসেন, তখন একবার হলেও নিজের স্টাইলে ‘বিয়ে’র পিঁড়িতে বসে যান। এ ধরনের সব বিয়েই টেকে, তা নয়। বেশিরভাগ সময়েই বাসর ঘরের ফুলসজ্জার ঘ্রাণ শেষ হতে না হতেই বেজে যায় তালাকের ঘণ্টা।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজে’লার কধুরখীল গ্রামের দারোগার বাড়ির বিয়েপাগল দিদারুল ইস’লামের গল্প এরকমই। তার কথিত ‘বিয়ে’র কোনোটি টেকে ১০ দিন, কোনোটি তার একটু বেশি!দু’র্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়া একটি অ’ভিযোগ থেকে জানা গেছে দিদারুলের এমন সব পিলে চ’মকানো তথ্য। এবার তিনি আলোচনায় এসেছেন এক রোহিঙ্গা নারীকে পর পর দুবার বিয়ে করে। বিয়ে করার আগে তিনি এনআইডি থেকে শুরু করে অন্য কাগজপত্রও জালিয়াতি করেছেন। এসব অ’ভিযোগ পেয়ে দিদারুলের বি’রুদ্ধে ত’দন্ত শুরু করে দুদক জে’লা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২।

জানা গেছে, অর্থের প্রলো’ভন দেখিয়ে এক রোহিঙ্গা নারীকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে আসেন দিদারুল। এরপর বিয়ে ছাড়াই ওই নারীর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন তিনি। পরে ২০১৮ সালের ২১ জুন ওই নারীকে ২০০ টাকা স্ট্যাম্পের হলফনামায় স্বাক্ষর করে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু ১০ দিনের মা’থায় হঠাৎ তাকে দেন তালাকও। তালাকের কিছুদিন পর আবারও ওই নারীর সঙ্গে ‘সংসার’ শুরু করেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে পরে আবারও তিনি বিয়ে করতে বাধ্য হন ওই রোহিঙ্গা নারীকে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নগরীর পাঁচলাইশ থা’নার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি পুত্রসন্তান।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রচলিত আইনকানুন না মেনেই রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করেন প্রবাসী দিদারুল ইস’লাম। সেখানে ভু’য়া ঠিকানা ও সনদ জালিয়াতি করে জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে করা হয়েছে পাসপোর্টও। কমিশনের প্রতিবেদনের পর শিগগিরই মা’মলা করা হবে তার বি’রুদ্ধে। গত ২৩ জানুয়ারি দু’র্নীতি দমন কমিশন জে’লা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর বরাবরে একটি অ’ভিযোগ যায় এই কাতার প্রবাসীর বি’রুদ্ধে।

বর্তমানে নগরীর কোতোয়ালী থা’নার জামালখান রোড এলাকায় থাকেন দিদারুল। জানা গেছে, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজে’লার কাঞ্চননগর এলাকার বাসিন্দা এক নারী দিদারুল ইস’লামের প্রথম স্ত্রী’। তার ওই সংসারে রয়েছে এক ছে’লে ও তিন মে’য়ে। অন্যদিকে নগরীর জামালখান রোডের সানমা’র স্প্রিং গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন দিদারুলের দ্বিতীয় স্ত্রী’। ওই সংসারে রয়েছেন তিন ছে’লে ও এক মে’য়ে। আবার চান্দগাঁও থা’নার কালুরঘাট ব্রিজ এলাকায় থাকেন তার তৃতীয় স্ত্রী’। ওই ঘরে রয়েছে দুই মে’য়ে ও এক ছে’লে।এদিকে পটিয়া উপজে’লার আমজুরহাট এলাকার বাসিন্দা এক নারী হলেন তার চতুর্থ স্ত্রী’। তিনি জামালখান এলাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। বোয়ালখালী এলাকার ২৮ বছর বয়সী এক নারী দিদারুলের পঞ্চ’ম স্ত্রী’। ওই নারীর কোনো সন্তান ছিল না। বিয়ের এক বছরের মা’থায় ওই নারীকে তালাক দেন দিদারুল। মোহরানা বাবদ শুধু ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ভ’য়ভীতি দেখিয়ে বিদায় করেন ওই নারীকে।

অ’ভিযোগে জানা গেছে, বোয়ালখালী উপজে’লার পশ্চিম গোম’দ’ণ্ডী এলাকার এক নারীর সঙ্গে অ’বৈধভাবে মেলামেশা করেন দিদারুল ইস’লাম। একপর্যায়ে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যান। বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি হলেও পরে তাকেও বিয়ে করতে বাধ্য হন দিদার। তবে বিয়ের পরপরই ওই নারীর গর্ভের সন্তানটি নষ্ট করা হয়। তালিকার ছয় নম্বরে থাকা এই স্ত্রী’র সঙ্গে প্রায় চার বছর সংসার করার পর তাকে তালাক দেন দিদারুল।তবে বিয়ের নামতায় সাত নম্বরে থাকা এক রোহিঙ্গা নারীকে পর পর দুবার বিয়ে করে তিনি ধ’রা পড়েন দুদকের জালে।দিদারুল ইস’লামের মোবাইলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার শ্যালক পরিচয়ে একজন বলেন, আপনার যা মন চায়, তাই লিখে দেন।

দুদকের এক কর্মক’র্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‌দিদারুলের বিয়ের কাবিননামায় তার স্ত্রী’র ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে কক্সবাজার সদর থা’নার ১২ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ কলাতলী এলাকা। ওই নারীর বাবার নাম হিসেবে যার উল্লেখ রয়েছে, ত’দন্তে দেখা গেছে ওই নামের ব্যক্তির সঙ্গে রোহিঙ্গা নারীটির কোনো স’ম্পর্কই নেই।অর্থের বিনিময়ে ভু’য়া কাগজপত্র তৈরি করতে এই স’ম্পর্ক বানিয়েছেন দিদার। তার বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ আসার পর ত’দন্ত করে কমিশন বরাবরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্তের পর তার বি’রুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।