খাদ্যের অভাবে দুই সন্তান বিক্রি করা দম্পতি পেলেন সহায়তা

সহায়তা পেলেন খাদ্যের অভাবে দুই শিশুসন্তানকে বিক্রি করা খলিল মন্ডল ও মর্জিনা দম্পতি। কুড়িগ্রামের উলিপুরের বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের ফকির মোহাম্মদ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা তারা। সহায়তা হিসেবে তাদের নগদ ১০ হাজার টাকা, ২০ কেজি চাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি ডাল ও লবণ, একটি কম্বল, লুঙ্গি ও শাড়ি দেয়া হয়েছে।সোমবার (১ মার্চ) বিকেলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে এ অসহায় দম্পতির হাতে নগদ টাকাসহ এসব সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নূর-এ-জান্নাত রুমি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু, বুড়াবুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মঞ্জু প্রমুখ।সহায়তা পেয়ে উচ্ছ্বসিত মর্জিনা বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ থেকে সহায়তা পেয়ে আমার খুবই আনন্দ লাগছে। সামনে ভাতার কার্ড পাব। ছেলেমেয়েদের নিয়ে পেট ভরে খেতে পারব।’

এর আগে গত রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম-এ ‘২৩ হাজার টাকায় দুই শিশু সন্তানকে বিক্রি করলেন অসহায় দম্পতি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এ খবর নজরে আসলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমি ও উপজেলা পরিষদচেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু অসহায় দম্পতির পাশে দাঁড়ান।উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিশ্চিতকরণের অংশ হিসেবে আমরা সন্তান দত্তক দেয়া অসহায় দম্পতি খলিল ও মর্জিনার পাশে দাঁড়িয়েছি। তারা যেন প্রতিবন্ধী ভাতা পায় সে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের মন্ডল পাড়া গ্রামের মৃত মজিদ মন্ডলের ছেলে খলিল মন্ডলের (৪৫) সাথে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের কৃষক মোচকেন আলীর মেয়ে মর্জিনা বেগমের (৩৬)। বিয়ের পর খলিল মন্ডলের কোনো বসতভিটা না থাকায় স্ত্রী মর্জিনা বেগমের চাচা রুস্তম আলীর জমিতে অস্থায়ীভাবে বসবাসের জায়গা দেন।

২০১৩ সালে শিমুলতলা এলাকায় সরকারিভাবে স্থাপিত ফকির মোহাম্মদ গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে তারা একটি ঘর বরাদ্দ পান। সেখানে থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজন দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। তাদের সংসারে কলিমা (৯), মিজানুর (৭), ইছানুর (৬) ও খুশি (৪) চার সন্তান রয়েছে।এরপর থেকে খলিল মন্ডল নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। কোনো কাজকর্ম না করতে পারায় সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারেন না। এর মধ্যে খলিলের স্ত্রী মর্জিনা প্যারালাইজড হয়ে ঘরবন্দি হয়ে পড়েন।

তারা দুই বছর আগে কন্যাশিশু জন্ম দিলে গত ১৫ মাস আগে তাকে তিন হাজার টাকায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শুলকুরবাজার এলাকার এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করেন। আড়াই মাস আগে জন্ম নেয়া আরেকটি কন্যাসন্তানকে কুড়িগ্রাম পৌর শহরের এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন ওই দম্পতি।

খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে খলিল ও মার্জিনার পুরো পরিবারের। কখনো বাবার বাড়ি থেকে সামান্য চাল অথবা প্রতিবেশীদের দেয়া খাবারে দিন কাটে। অভাবের সংসার ও শারীরিকভাবে অসুস্থ দম্পতি সন্তানদের ভরণ-পোষণ ও খাবারের জোগান দিতে না পারায় প্রথম কন্যাসন্তান কলিমাকে (৯) রংপুরে কাজে দিলেও বয়স কম বলে তাকে ফেরত পাঠায়।