শাহিদা খাতুনের দুটি পা ও একটি হাত নেই। সচল একটি মাত্র হাত। সেই হাতের আঙুল সচল তিনটি। এই তিন আঙুলকে সম্বল করেই মাস্টার্স পাস করেছেন তিনি।প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। যে প্রতিবেশীরা তার জন্মকে ‘পাপের ফল’ বলে ঘৃণায় মুখ সরিয়ে নিয়েছিল, তারাই এখন যেকোনো দরকারে ছুটে আসে শাহিদার কাছে। সেই বেদনা আর সংগ্রামের ইতিবৃত্তি তুলে ধরে অশ্রুসিক্ত শাহিদা বললেন, এখন তার একটি চাকরির প্রয়োজন। আর তিনি তার কষ্ট আর সংগ্রামের কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চান।
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মুদি দোকানি মো. রফিউদ্দিনের ছয় সন্তানের মধ্যে ৪র্থ শাহিদা। ১৯৯১ সালে শাহিদার জন্ম হলে গোটা পরিবারে যেন আঁধার নেমে আসে। কারণ, মেয়েটির একটি হাত ও দুটি পা নেই। সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন শাহিদার মা জোহরা বেগম।বললেন, ‘পাড়া প্রতিবেশীরা বলতো, পাপ করেছি, তারই পাপের ফল পেয়েছি। ঘিন্নায় মানুষ কথা বলতো না।’ শাহিদাকে বলতো, ‘তুই কি করতি হইছিস? তোরে দিয়ে তো কিছ্ছু হবে না। আমাগের হলি তো মাইরে ফেলতাম!’ এই ছিল শাহিদার শৈশব!
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
জোহরা বেগম জানালেন, তিনি সেই সময় শিমুলিয়ার খ্রিস্টান মিশনে হাতের কাজ (হস্তশিল্প) করতেন। শাহিদাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। মিশনের সিস্টার জোসেফ মেরী তাকে হাতেখড়ি দেন। শাহিদার বয়স পাঁচ বছর হলে সেন্টলুইস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে নিয়ে যান। কিন্তু প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্কুলের শিক্ষকরা তাকে স্কুলে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়।
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
শিক্ষকদের বক্তব্য, এই মেয়ে চলতে ফিরতে পারবে না, বাথরুম করতে পারবে না। পরিবেশ নষ্ট করবে। এমন পরিস্থিতিতে শাহিদার পাশে এসে দাঁড়ান মিশনের সিস্টার জোসেফ মেরী। তিনি দৃঢ় ভাষায় বলে দেন, যে শিক্ষক এই মেয়েটিকে স্কুলে ভর্তি করতে আপত্তি জানাবে, তার স্কুলে আসার দরকার নেই! অবশেষে স্কুলে ভর্তির সুযোগ মেলে তার।
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
কখনও মা-বাবা, কখনও ভাই-বোনের কোলে চড়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু হয় শাহিদার। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কোনো কিছুই তাকে স্কুল থেকে দূরে রাখতে পারেনি। পড়াশোনার প্রতি আন্তরিক ও অদম্য আগ্রহের কারণে শিক্ষকরাও পরে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন। এভাবেই ২০০৭ সালে সেন্টলুইস হাইস্কুল থেকে ২০০৭ এসএসসি ও ২০০৯ সালে শিমুলিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
শাহিদা জানান, এরপর বাড়ি থেকে ৮ কিলোমিটার দূরের শহিদ মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হন। প্রতিদিন একশ’ টাকা ভাড়ায় একটি ভ্যান ভাড়া করে দেন বাবা। সেই ভ্যানে চড়ে প্রতিদিন কলেজে যাতায়াত করে বিএ পাস করেন। এরপর যশোর এমএম কলেজ থেকে ২০১৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেন শাহিদা।
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
শাহিদার বাবা মো. রফিউদ্দিন জানান, এই মেয়ের জন্মের পর কতজন যে কত কথা বলেছে তার ঠিক নেই। সব সহ্য করেছি। কী করবো; সন্তান তো! ফেলে তো দিতে পারি না। তারপর মেয়েটি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছে। এখন তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা হয়। একটি চাকরি বাকরি হলে হয়তো মেয়েটার একটা গতি হতো।
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
শাহিদা বলেন, তার একটি হাত ও একটি পায়ের প্রায় পুরোটাই অচল। বাকি একটি পায়ের কিছু অংশ আর বাম হাত দিয়েই তিনি চলাচল এবং কাজ কর্ম করেন। বাম হাতটি দেখিয়ে বললেন, এই হাতেও আছে চারটি আঙুল। তার মধ্যেও একটি অচল। এই তিন আঙুলে কলম ধরে তিনি এমএ পাস করেছেন।
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
শাহিদা আরও জানালেন, দিনের পর দিন কষ্ট-সংগ্রাম করে লেখাপড়া শিখেছি। কয়েক বছর আগে ঝিকরগাছার রঘুনাথনগরের বাবর আলী সরদার বিশেষ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলে ঢুকেছি। কিন্তু স্কুলটিরই এমপিওভুক্তি হয়নি। এখন চাকরির বয়স আর ৮/৯ মাস আছে। এর মধ্যে জীবনের অবলম্বনের জন্য একটি চাকরি দরকার।’ আর শাহিদার স্বপ্ন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একজন প্রতিবন্ধীর কষ্ট ও সংগ্রামের গল্প তাকে শোনাবেন।’
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
![](https://banglatraffic.com/salim.jpg)
শাহিদার ছোটবোন অনার্সপড়ুয়া নাজমা খাতুন বলেন, আপা যে কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে, তা না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। সেই কষ্টের কথা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। এখন যদি তার একটি চাকরি হয় তাহলে সমাজের আর দশটা প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েও তাকে অনুসরণ করতে পারবে। তারাও লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, সমাজের বোঝা হবে না।শাহিদার ব্যাপারে কথা হয় যশোর জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, শাহিদা খাতুনকে তিনি চেনেন। সে মেধাবী এবং ভালো একটি মেয়ে। অনেক কষ্ট করে সে এই পর্যন্ত এসেছে। তার ভালো এবং সহায়ক একটি কর্মসংস্থান হওয়া দরকার।