মাকে খুঁজছে, বারবার কেঁদে উঠছে, খাওয়ানো যাচ্ছে না

বিশ্বজিৎ পাল বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: মায়ের বুকের দুধই ছিল সাত মাস বয়সী ওজিহার বেঁচে থাকার অবলম্বন। তাকে এখন ফিডারে করে গুঁড়া দুধ দেওয়া হচ্ছে। ওজিহা কখনো মুখে নিচ্ছে, কখনো নিচ্ছে না। সে তার মায়ের মুখ খুঁজে বেড়াচ্ছে।

মায়ের মুখের মিল না পেয়ে বারবারই কেঁদে উঠছে। খেলনা দিয়ে, এটা-সেটা বলে তাকে বুঝিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন স্বজনরা।

ওজিহার মা ও দুই ভাইকে খুন করেছেন জহিরুল ইসলাম নামেন এক আত্মীয়। ওজিহা কিছু বোঝে না বলে সাক্ষী হতে পারবে না―এমনটা ভেবেই তার ওপর আঘাত করেননি খুনি।

এদিকে স্ত্রীসহ দুই সন্তানকে হারিয়ে প্রবাসফেরত মো. শাহ আলম সরকারও নির্বাক। প্রায় সময়ই তিনি অজ্ঞান থাকছেন। স্ত্রী-সন্তানদের মৃত্যুর খবর শুনে মঙ্গলবার গভীর রাতে তিনি দেশে ফেরেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার জেকি আক্তার এবং তার দুই ছেলে মাহিন ও মহিনের লাশ বুধবার সন্ধ্যায় দাফন করা হয়েছে।

এর আগে দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেকি আক্তারের বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে বাঞ্ছারামপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত জেকি আক্তারের ভাগ্নি জামাই জহিরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্বাগত সৌম্যের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আনিকার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সমস্যা সমাধানের আশায় খালাশাশুড়ি জেকি আক্তারের কাছে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটান জহিরুল।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে করা এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

জেকি আক্তারের বাবা মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘ওজিহা তার মায়ের চেহারার সঙ্গে কারো চেহারার মিল পাচ্ছে না। সে তার মাকে খুঁজছে। বারবার কেঁদে উঠছে। তাকে ঠিকভাবে খাওয়ানো যাচ্ছে না। আপাতত সে তার এক চাচির কাছে আছে।’-কালের কণ্ঠ