ছাগলের খামার ও জামদানিতে সফল মাকসুদা

মাকসুদা আক্তারের জন্ম নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্বপুর গ্রামে। চলতি বছরের মার্চে তিনি এমবিএ শেষ করেছেন। লেখাপড়া শেষ করে দেশের ছেলেমেয়েরা যখন চাকরির পেছনে ছোটেন কিংবা চাকরি ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেন না, মাকসুদার ক্ষেত্রে ঘটেছে ঠিক তার উল্টো ঘটনা।

লেখাপড়ার শেষে মাকসুদা ঠিক করেন ব্যবসা করবেন। করছেনও তা-ই। নিজের পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে মাকসুদা বলেন, ‘শখ থেকে ব্যবসার চিন্তা মাথায় আসে। এখন আমার একটি খামার আছে। ঘরোয়াভাবে পরিচালিত হচ্ছে এটি। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে জমানো ১১ হাজার টাকা দিয়ে শখ করে দুটি ছাগল কিনি। আমার মায়ের হাঁস, মুরগি, ছাগল, গরু পালনে বেশ ঝোঁক আছে।’

মাকসুদা আরও বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে আমিও এসব পালনে মনোযোগী হই। এর মাঝে আরও ৩-৪টি ছাগল কিনি। আমার ছাগল বেশ ভালো লাগতো, তাই কেনা। সেই থেকেই আস্তে আস্তে ছাগলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে ৬টি ছাগল বিক্রি করি। চলতি বছরের মার্চে ঈদুল ফিতরের আগে ১২টি ছাগল বিক্রি করি। এখন ১৪টি ছাগল এবং একটি গরু আছে। আমার খামারের কার্যক্রম অফলাইন ভিত্তিক।’

মাকসুদা খামারের পাশাপাশি জামদানি নিয়েও কাজ করছেন ২০২০ সাল থেকে। যখন পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে; তখন বেকার সময় না কাটিয়ে কিছু করার ইচ্ছা থেকে মূলত এ কাজে নেমে পড়া। জামদানি ব্যবসায় মাকসুদার প্রথমে মূলধন ছিল ৩ হাজার ৭০০ টাকা।

পড়াশোনা শেষ করে কেন ব্যবসা করার চিন্তা করলেন এমন প্রশ্ন করলে মাকসুদা বলেন, ‘বিজনেস করার ইচ্ছা ছিল সব সময়ই। আমার পড়াশোনাও বিজনেস ডিপার্টমেন্টে। হুট করে আমি ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিইনি। ব্যবসার চিন্তাটা প্রথমে আসে শখ থেকে। সেই চিন্তা থেকেই ধীরে ধীরে আমার বিজনেসটা দাঁড় করিয়েছি।’

মাকসুদার অনলাইন পেজের নাম ‘সুকন্যাস হ্যামলেট’। কথায় কথায় অনলাইনে জামদানির ব্যবসার শুরুর গল্পটা শোনালেন তিনি, ‘জামদানির ব্যবসা অনলাইন দিয়েই শুরু। তবে এটি শুরুর একটি মজার গল্প আছে। আমার এক বড় ভাই তার স্ত্রীর জন্য জামদানি শাড়ি চেয়েছিলেন। ভাবির জন্য জামদানি শাড়ি কনতে গিয়ে এ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। তারপর ভাবলাম এটা নিয়ে কাজ করা যায়। তাছাড়া আমি জামদানির এলাকায় থাকি। এটা নিয়ে কাজ করতে আমার অনেক সুবিধা হবে।’

অনলাইন ব্যবসার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মাকসুদা বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসা করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ব্রিতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। কাস্টমারকে পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে বিশ্বাস করানো খুব কঠিন। অনলাইনের পণ্যে অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না। কেউ আবার অর্ডার দিয়ে শাড়ি বানানোর পর নিতে চান না। সে জন্য এখন ৩০% অ্যাডভান্স নিয়ে থাকি। আবার অনেকেই মনে করেন প্রতারণার মুখে পড়তে হবে।’

মাকসুদা তার ব্যবসায় এখনও কোনো কর্মী নিয়োগ দেননি। মাকসুদার এ কাজে তার বাবা-মা সহযোগিতা করছেন। এ বছর মাকসুদার খামার থেকে প্রায় ৭০ হাজার টাকা আয় হয়েছে। অন্যদিকে জামদানির বিক্রিও ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নতুন যারা এ কাজে আসতে চান তাদের জন্য মাকসুদা বলেন, ‘নতুন কেউ যেটাই করুক, আগে কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। খামার করতে চাইলে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এখানে বর্জ্য হবে, দুর্গন্ধ হবে। গরু-ছাগলকে নিজের বাচ্চার মতো কেয়ার করতে হবে। তবেই ভালো কিছু পাবেন।’