বিয়ে শেষে ফেরার পথে এক পরিবারের সবাই নিহত

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় একটি পরিবারের চারজনই নিহত হয়েছেন। তারা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের বনহাটি গ্রামের বাসিন্দা। নিহতরা হলেন মফিজ উদ্দিনের ছেলে সুজন মিয়া, তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার, তাদের ছেলে সজীব মিয়া ও ইসমাইল মিয়া।

নিহত সুজনের ভাই স্বপন মিয়া বলেন, সুজন মিয়া ঢাকার মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ভ্যানগাড়িতে ডাব বিক্রি করে সংসার চালাতেন। গত শুক্রবার ভাইয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে বাড়িতে যান। সোমবার ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছিলেন।

স্বপ্ন শেষ সাউথ কোরিয়ার স্কলারশিপ পাওয়া আফজালের: আফজাল হোসেন ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স শেষে সাউথ কোরিয়া স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পর চলে যাওয়ার তারিখ ছিল। গতকাল সোমবার তার বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন সৌদি আরবে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। রাত ৯টায় ফ্লাইট ছিল তার। বড় ভাইকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসার জন্য দুপুরে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। এরই মধ্যে দুর্ঘটনায় আফজাল হোসেন মারা যান। এ তথ্য জানান ভৈরবের আগানগরের আরমান হোসেন নামে আফজালের এক ভাই।

ভিক্ষা করতে এসে নিখোঁজ শারীরিক প্রতিবন্ধী রাকিব: ভৈরবপুর গ্রামের রিপা আক্তার বলেন, আমার ছেলে রাকিব মিয়া (১৩) শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার একটি পা নেই। সে ট্রেনে উঠে ভিক্ষা করত। প্রতিদিনের মতো আজকেও ট্রেনে করে ভিক্ষা করতে বের হয় দুর্ঘটনার সময় সে ট্রেনে ছিল। আমার ছেলে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘরে না ফেরায় ছেলের সন্ধানে ভৈরব হাসপাতালে এসেছি। বেঁচে আছে কি না, আমি জানি না। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় বাবাকে হারানো বাজিতপুর উপজেলার দয়গাঁও বোর্ডবাজারের রনি বলেন, কয়েকদিন আগে নিজের স্ত্রী ও ৪০ দিনের শিশু সন্তানকে নরসিংদী নিজ বাড়িতে যান। সোমবার ট্রেন দুর্ঘটনায় তার বাবা নাসির উদ্দীন মারা গেছেন। তবে তার শিশু সন্তানসহ পরিবারের বাকি চারজন অক্ষত আছেন। ভৈরব রানী বাজারের শান্তী রানী শীল জানান, তার স্বামী সবুজ শীল সোমবার দুপুরে নরসিংদী বালিয়ারচর বৌ বাজারে মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি উদ্দেশে রওনা হন। পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় তার স্বামী মারা যান।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, রাত ৯টা পর্যন্ত ১৭ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় ৭৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, নিহত প্রত্যেককে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা করা হবে।