ছাত্রলীগ ‘অবরুদ্ধ করে রাখার পর’ বাসায় ফিরে কুয়েট হল প্রাধ্যক্ষের মৃত্যু

ছাত্রলীগ নেতারা অবরুদ্ধ করে রাখার পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।তিনি কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন।এ ঘটনায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আরিফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার ওই শিক্ষকের নিজ কক্ষে ছাত্রলীগ নেতাদের একটি দল ঢোকা ও বের হওয়ার ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যায়, ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ২০-২২ জনের একদল শিক্ষার্থী শিক্ষক সেলিম হোসেনকে ক্যাম্পাসে গতিরোধ করেন এবং পরবর্তীতে তারা শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করেন।সিসিটিভির ফুটেজ অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং দুপুর ১টা ২৯ মিনিটে বের হয়ে যায়। প্রায় ৪৫ মিনিট তারা শিক্ষক সেলিম হোসেনের কক্ষে অবস্থান করে।

কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, মূলত লালন শাহ হলের নতুন ডাইনিং ম্যানেজার নিযুক্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ওই অংশটি প্রভাব খাঁটিয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট সেলিম হোসেনকে মানসিকভাবে নাজেহাল করে। সেখানেই তিনি মাইনর স্ট্রোক করেন। পরবর্তীতে বাসায় যাওয়ার পর বাথরুমে পড়ে যান। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে কুয়েট মেডিকেল সেন্টার ও পরবর্তীতে নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।

মঙ্গলবার রাতে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষক সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে এক ধরনের হত্যাকাণ্ড দাবি করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষকের সঙ্গে যারা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে তাদের শাস্তির দাবি জানান তারা। পরবর্তীতে উপাচার্যের তদন্ত কমিটি গঠন ও শিক্ষক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন করা হবে এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শান্ত হন শিক্ষার্থীরা।এদিকে কুয়েট শিক্ষক সমিতি সকালে এক জরুরি সভায় মিলিত হয়েছে। সভা থেকে শিক্ষকদের কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ড. মো. সেলিম হোসেনর মৃত্যু আমরা স্তব্ধ হয়ে গেছি। সিসি টিভির ফুটেজ দেখে এ ঘটনার তদন্ত করা হবে। পরে ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। আমরা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আগামীকাল একটি সভা ডেকেছি। শিক্ষকেরা কি ধরনের ভূমিকা নেবেন সেই সভায় আলোচনা করা হবে।’এ বিষয়ে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।কুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক ড. ইসমাইল সাইফুল্লাহ বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’