১০ হাজার টাকার গুজবে কম্পিউটারের দোকানে শিক্ষার্থীদের ভিড়

শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা অনুদান দেবে সরকার। এমন গুজবে কান দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য গাইবান্ধা শহরের ট্রাফিক মোড়ে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাগজভর্তি ফাইল নিয়ে অপেক্ষায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। শনিবার (০৬ মার্চ) রাত ৮টা ৫০ মিনিটে জেলা শহরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণে মহাব্যস্ত। আবার কেউ সিরিয়ালের অপেক্ষায়। একই চিত্র শহরের সবগুলো কম্পিউটারের দোকানে। এই বিষয়ে সদরের খোলাহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পাপুল ইসলাম বলেন, সরকার নাকি ১০ হাজার টাকা অনুদান দেবে। সেই অনুদানের জন্য সবাই নিবন্ধন করছে দেখে আমিও এসেছি। কারা, কোথায় থেকে, কবে, কিসের অনুদান দেবে বা এর প্রক্রিয়া কী কিছুই জানা নেই তার।

কম্পিউটার অপারেটর তারিকুল আহসান বলেন, এ বিষয় সম্পর্কে তারও কোনো ধারণা নেই। এতদিন আমরা এ বিষয়ে কিছু জানতাম না। সকাল থেকেই নিবন্ধন করে দিচ্ছি। তবে নিবন্ধনের ফরম পূরণে শিক্ষার্থীর অভিভাবকের আয়ের তথ্য নিচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের অনুদান দেয়া হবে।

আরেকজন কম্পিউটার অপারেটর মো. আবদুল্লাহ বলেন, আমরা ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নিবন্ধন করে দিচ্ছি। এর আগে এত ছাত্রছাত্রী নিবন্ধনের জন্য আসেনি। আজ হঠাৎ করেই এত ভিড় হচ্ছে। কতজনকে ঠিক কত টাকা করে দেবে তা সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই।

অভিভাবক হাবিজার রহমানের মেয়ে থাকেন ঢাকায়। অনেকের মুখে অনুদানের কথা শুনে এসেছেন মেয়ের জন্য নিবন্ধন করতে। তিনিও বলতে পারলেন না কে অনুদান দেবে, কেন দেবে!শিক্ষার্থী সুমন সরকার বলেন, ফেসবুকে বন্ধুদের কাছে শুনেছি ১০ হাজার টাকা অনুদানের কথা। এরপর স্কুলের স্যারের কাছে গেলে তিনি কিছু বলতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নসহ বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে নিবন্ধনের জন্য বন্ধুরা মিলে কম্পিউটারের দোকানে এসেছি।

এর আগে, দুপুরে সদরের তুলসীঘাটে সবগুলো কম্পিউটারের দোকানে শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা যায়। কাশিনাথ উচ্চ বিদ্যালয়, রেবেকা হাবীব উচ্চ বিদ্যালয় ও তুলসীঘাট শামছুল হক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা কেউ বলেন, ১০ হাজার টাকা করে করোনা ভাতা দেয়া হবে সেজন্য রেজিস্ট্রেশন করছি। আবার কেউ বলেন, উপবৃত্তির জন্য নিবন্ধন করতে এসেছি আবার কেউ জানায় সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা মহামারিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশি’র আওতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অনুদান প্রদানের বিজ্ঞপ্তিতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয় সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হবে। সেই গুজবের রেশ ধরে গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকায় দিনভর এমনকি রাতেও নিবন্ধনের জন্য কম্পিউটারের দোকান গুলোতে ভিড় করে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে।

মাউশি ১৮ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে অনুদানের জন্য মাউশির ওয়েবসাইটে আবেদন ফরমে আবেদন করতে বলা হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে সবার জন্য সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা বলা নেই। বলা আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেরামত ও সংস্কার, আসবাবপত্র ক্রয়সহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজের জন্য, শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের দুরারোগ্য ব্যাধি ও দৈব দুর্ঘটনার সহায়তার জন্য এবং শিক্ষার্থী যারা দুরারোগ্য ব্যাধি, দৈব দুর্ঘটনা এবং শিক্ষাগ্রহণ কাজে ব্যয়ের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে শিক্ষার্থীদের এ বিশেষ অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, অসহায়, রোগাক্রান্ত, গরিব, মেধাবী, অনগ্রসর সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

এই অনুদানের আবেদনের সময়সীমা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মাউশি সেই আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়েছে আগামীকাল (৭ মার্চ) পর্যন্ত। ২৮ ফেব্রুয়ারি সময় বাড়ানোরও ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের অনুদান প্রদানের লক্ষ্যে অনলাইনে আবেদনের সময়সীমা আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো।

এদিকে মাউশির বিজ্ঞপ্তিতে অনুদানের টাকার পরিমাণ উল্লেখ না থাকলেও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাউশি থেকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ছড়িয়ে পড়েছে। এই অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ থাকা গাইবান্ধার প্রায় সকল স্কুল-কলেজগুলোতে শনিবার দিনভর প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার জন্য ভিড় করে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। দিনভর এমনকি রাতেও দেখা গেছে কম্পিউটারে টাইপ করা প্রত্যয়নপত্রের ফরম পুরণে ব্যস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, কারা এই আবেদনের জন্য যোগ্য তা স্পষ্ট করা দরকার। না হলে গণহারে টাকার আশায় আবেদন করে যারা বঞ্চিত হবে, তারা হতাশ এবং বিভ্রান্ত হবে। কম্পিউটারের দোকানগুলোতে হাজার-হাজার ছেলে মেয়ে আবেদনের জন্য ভিড় করলেও প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।