‘সরকার যদি আমাকে সাহায্য করতো আমি পড়ালেখা শিখতাম’

সংবাদ প্রকাশের পর শিকলবন্দী থেকে মুক্ত হয়েছে ভিসা পাসপোর্ট ছাড়াই বিমানে ওঠা আলোচিত শিশু জুনায়েদ মোল্লা। না বলে আর কোথাও যাবে না এমন আশ্বাস পেয়েই শিকল খুলে দেয়া হয়। তবে পড়াশোনার খরচ দিতে না পারার কারণেই বারবার পালিয়ে যেত বলে জানায় শিশুটি। পাশপাশি পড়ালেখা শিখে পাইলট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে জুনায়েদ।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুনায়েদের বাড়ী গিয়ে দেখা যায়, খুলে দেয়া হয়েছে জুনায়েদের পায়ের শিকল। এরপরই সে ঘরের বাইরে মুক্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়ায়। বাড়ীর পাশের খালে গোসল করে জুনায়েদ। তবে তাকে দেখতে এখনো বাড়িতে ভিড় করছে এলাকাবাসী।

জানা গেছে, গত বুধবার সকালে ঢাকা বিমান বন্দর থানা থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পারইহাটি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় আলোচিত শিশু জুনায়েদ মোল্লাকে। এরপর বারবার পলানোর কারণে শিকলবন্দী করে রাখা হয়। জুনায়েদের এক পায়ে শিকল অন্য পাশ খুটির সঙ্গে ছিল তালাবদ্ধ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর খুলে দেয়া হয় শিকল। এরপর থেকে মুক্ত পরিবেশে আবারো ঘুর বেড়াতে পারছে শিশুটি। তবে পরিবার থেকে পড়ালেখার খরচ দিতে না পারার কারণে মাদরাসা থেকে গালমন্দ শোনায় বারবার পালিয়ে যেতো শিশুটি। এবার আর পালানো নয় পড়ালেখা শিখে পাইলট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে জুনায়েদ। সেই সঙ্গে জানায়, ঘুরতে চায় দেশ বিদেশ।

এদিকে শিকলবন্দী করা অমানবিক বলে মনে করেছে জুনায়েদের পরিবার। তবে আর কোথাও পালিয়ে যাবে না বলে আশ্বায় দেয় সে। ফলে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে শিকলবন্দী থেকে মুক্ত করা হয়েছে বলে জানায় জুনায়েদের পরিবার।

আলোচিত শিশু জুনায়েদ জানায়, মাদরাসায় পড়ার সময় আব্বার কাছে কাগজ ও কলম কেনার টাকা চাইতাম। আব্বা পড়ালেখার খরচ দিতে পারতো না। খাতা-কলমের জন্য হুজুর মারতো। মার খাওয়ার ভয়ে মাদরাসা থেকেও মাঝে মধ্যে পালিয়ে যেতাম।

জুনায়েদ আরো জানায়, আমি পড়ালেখা শিখতে চাই। শিখে পাইলট হয়ে বিমানে দেশ বিদেশ ঘুরতে চাই। সরকার যদি আমাকে সাহায্য করতো আমি পড়ালেখা শিখতাম।

জুনায়েদের চাচার ইউসুফ মোল্লা বলেন, জুনায়েদ পাগল নয় যে ওকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখব। ওর শিকল খুলে দেয়া হয়েছে। ও এখন আগের মতো ঘুরে বেড়াতে পারছে। ওর বিমানে ওঠার শখ ছিল। কিন্তু ধরা পড়ায় জুনায়েদের বিমানে চড়ার স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি। তাই বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে জুনায়েদের ইচ্ছা পূরণের দাবি জানাই।

জুনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লা বলেন, ওর বয়স যখন ছয় বছর তখন মাদরাসায় ভর্তি করে দেই। মাকে দেখার জন্য মন সব সময় ব্যাকুল থাকত। মাঝে মাঝে মাদরাসা থেকে পালিয়ে প্রথমেই তার মায়ের কাছে যেত। মা তাকে আশ্রয় দিত না। কষ্টে সে অন্যত্র যেত। সেখান থেকে খুঁজে নিয়ে আসতাম। মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে নিয়ে এসে পায়ে শিকল দিয়েছিলাম যাতে ও আবার পালিয়ে যেতে না পরে। তবে খবর প্রকাশ হবার পর ওই পায়ের শিকল খুলে দিয়েছি।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়েছিল শিশু জুনায়েদ। রাত সোয়া তিনটার দিকে ওই ফ্লাইট উড্ডয়নের কথা ছিল। প্রায় ঘণ্টার মতো ওই ফ্লাইটের সিটে বসে ছিল জুনায়েদ। পরে এক যাত্রী উঠে অন্য সিটে বসতে বললে ধরা পড়ে পাসপোর্ট, টিকিট ও বোর্ডিং পাস ছাড়াই বিমানে উঠেছিল শিশুটি। পরে বিমানবন্দর থানা পুলিশ শিশুটিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।