সমালোচনার চেয়ে অনেক অনেক বেশি বাহবা পাচ্ছেন সাকিব

তানজিম হাসান সাকিব ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী- তারা দুইজনই বাংলাদেশ জাতীয় দলে নতুন। মৃত্যুঞ্জয় বর্তমানে দলে না থাকলেও আছেন সাকিব। ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে জয়ের নায়কদের একজনও এই সাকিব। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সাকিব তার অবসর রাঙানোর পরই ফেসবুকে তার কিছু পোস্ট নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে। তবে সমালোচনার চেয়ে অনেক অনেক বেশি বাহবা পাচ্ছেন সাকিব। এই সময়ে তিনি পাশে পেয়েছেন বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়কেও।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল তানজিম হাসান সাকিব। তবে শুধু ক্রিকেটপাড়ায় না, সকল প্রকার মানুষের ফেসবুক পোস্টেই এখন সাকিবের বন্দনা দেখা যাচ্ছে। এযুগে যেখানে যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে নানান অপকর্মে, যখন তারা ট্রেন্ডের সাথে গা ভাসিয়ে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছে, সেখানে ব্যতিক্রম সাকিব। তিনি ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ পাত্তা দেন না। পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান ইসলাম নিয়ে যেমন নিজে পড়াশোনা করেন, তেমনই সবার কাছে তা ছড়িয়ে দিতে মোটেও দ্বিধাবোধ করেন না সাকিব।

সাকিবের এই সাহসিকতা দেখে দেশের মানুষ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। কেউ কেউ তো দাবি তুলে বসেছেন সাকিবকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়ার। সেই তালিকায় শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাও আসছেন। তারা হয়ত ভুলে গেছেন কিংবা জানেনই না যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন অর্থাৎ সংবিধান নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেমন দিয়েছে, তেমনই সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ নাগরিকদের অধিকার দিয়েছে যেকোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন ও প্রচারের।

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা সাকিব শুরু থেকেই তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করেন। ক্রিকেট মাঠেও তাকে আত্মবিশ্বাস এনে দেন আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস। সেই দাপট তিনি দেখিয়েছেন অভিষেক ম্যাচেই। ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে আউট করে দুর্দান্তভাবেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছেন তিনি।

এর আগে ইমার্জিং এশিয়া কাপের দলেও ছিলেন সাকিব। সেই টুর্নামেন্টের সময়ই বিডিক্রিকটাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট আমার পেশা। এখান থেকে আমি উপার্জন করি। কিন্তু আমার আসল জীবন হলো… আমি পরকালে যদি সফল হতে না পারি তাহলে আসলে আমি ব্যর্থই থেকে যাব। আমি নিজেকে প্রস্তুত করছি আল্লাহর জন্য। কারণ সবাইকেই একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। কখন কে মারা যাবে, কেউ জানে না। তাই আমি চেষ্টা করি সবসময় ইসলাম মেনে চলার জন্য, ইসলামের মধ্যে থাকার জন্য।’

‘আর এই জিনিসটা আমার খেলাকেও অনেক সাহায্য করে। আমাকে শৃঙ্খল থাকতে শেখায়। মানসিকভাবেও আমি শক্ত থাকি। আমার অন্য কোনো দিকে নজর যায় না, একদিকেই ফোকাস ধরে রাখতে পারি। এটা আমাকে দুনিয়া ও আখিরাত দুই দিকেই সাহায্য করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করলেও সাকিব-মৃত্যুঞ্জয়ের সতীর্থরা কিন্তু বরাবরই তাদের পাশে আছেন। ধর্মীয় বিষয়ে জানতে তারা এই দুই ক্রিকেটারের শরণাপন্নও হন। বাইরের মানুষের এই বাঁকা চোখে তাকানোকে মোটেও গোনায় ধরেন না সাকিবরা।

সাকিব জানান, ‘সতীর্থরা খুবই ইতিবাচকভাবে দেখেন। যখনই তারা কিছু একটা না বোঝে বা ইসলামিক কোনো বিষয় জানার প্রয়োজন হয়, আমাদের দুইজনের কাছে আসে। আমরা যদি তাহলে আমরা বলি নাহলে বিভিন্ন স্কলারের কাছে প্রশ্ন করে ওদেরকে উত্তর জানাই।’

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার কারণেই সাকিব ও মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যকার বন্ধুত্ব খুবই ভালো। নিন্দুকরা যখন সাকিবকে নিয়ে কাঁটাছেড়া করার চেষ্টা করছেন, তখনই তার পাশে দাঁড়িয়ে মনোবল জুগিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। বন্ধুকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, নিন্দুকের কথায় কান না দিয়ে নিজের জীবনকে নিজের মতো গুছিয়ে রাখার জন্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মৃত্যুঞ্জয়ই বার্তা দিয়েছেন সাকিবকে নিয়ে।

সাকিবের পাশে দাঁড়িয়েছেন এখন মৃত্যুঞ্জয় বলেছেন, ‘আমরা দুনিয়ার কোনো মানুষকে খুশি কর‍তে আসিনি, আমরা শুধুই এসেছি আল্লাহকে খুশি করতে। তবে আমরাও ভুলের উর্ধ্বে নই। আমরা তো আমাদের দ্বীন (জীবনবিধান) ইসলাম প্রচার করছি, এর বাইরে কিছুই না।