যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ভারতীয় আমেরিকানরা ভালোবাসেন। এক ভারতীয় জীববিজ্ঞানীর মেয়েটি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেখানকার অন্যতম শ্রদ্ধাভাজন ক্যান্সার গবেষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। কঠোর পরিশ্রমকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন হ্যারিস। তার ক্যারিয়ার বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিপূর্ণ।
সিনেটর হিসেবে তিনি এমন এক অভিবাসী নীতির জন্য লড়াই করেছেন যা ভারতীয় আমেরিকান কমিউনিটির কাম্য। এর মধ্যে এইচ১-বি সাময়িক কর্মসুযোগ ভিসা সংখ্যার সর্বোচ্চ সীমা তুলে নেয়া ও এই ভিসাধারীর স্বামী-স্ত্রীদের কর্মসংস্থানের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়গুলো রয়েছে। মার্কিন রাজনৈতিক সিস্টেমে নিজেদের কাউকে দেখতে পেলে ভারতীয় আমেরিকানরা যে গর্ববোধ করবেন তা জানা কথা।
তবে ভারতীয় আমেরিকানদের জন্য ভালো হলেই তা যে ভারতের বর্তমান সরকারের জন্য সুখবর হবে তা নয়। বিপরীতে দেখা যায় : ট্রাম্পের ওয়াশিংটন নীতি যখন চীনের বিরুদ্ধে তার কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন মিত্রের খোঁজ করছে তখন বাইডেনের টিম (এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু জানি) এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি কিলক প্রবেশ করানোই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
হ্যারিস নিজেই এই কিলক প্রবেশ করানো কাজের অংশ হতে পারেন। সিনেটর হিসেবে হ্যারিসের পুরনো কূটনৈতিক বক্তব্যগুলোতে ভারত সরকারের ব্যাপারে কথা এসেছে। তার কথায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)’র নেতৃত্বাধীন সরকারের ব্যাপারে কোন ভালোবাসা প্রকাশ পায়নি।
গত বছর তিনি এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সফরকারী ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আচরণেরও তীব্র সমালোচনা করেন। আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকান ও রিপাবলিকান সিনেটর প্রমিলা জয়পালের সঙ্গে একই টেবিলে বসে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান জয়শঙ্কর। ভারত সরকারের কাশ্মীর নীতির সমালোচনা করে প্রতিনিধি পরিষদে একটি প্রস্তাব স্পন্সর করেছিলেন জয়পাল।
ভারতের সঙ্গে কমলা হ্যারিসের পারিবারিক সংযোগ তার মনোভাবকে রঞ্জিত করতে পারে। তার মা এমন এক রাজ্য তামিলনাড়ুর অধিবাসী যেখানে গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে মোদির দল একটি আসনও পায়নি। বিজেপিকে প্রায়ই হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তাদেরকে আঞ্চলিক আন্দোলন হিসেবেও দেখা যেতে পারে,যাদের তৎপরতা কেবল উত্তর ভারতের হিন্দি হার্টল্যান্ডে কেন্দ্রীভূত। এই আঞ্চলিক ভিত্তিটি সাম্প্রতিক সময়ে সম্প্রসারিত হলেও ৯০ শতাংশ হিন্দু জনগণের রাজ্য তামিলনাড়ু হিন্দি ভাষাভাষী নয়। ফলে রাজ্যটি এখনো বিজেপি-বিরোধী শিবিরের দুর্গ।
কমলা হ্যারিস নিজেও ভারত সরকারের কাশ্মীর নীতি কট্টর সমালোচক। স্পষ্ট করে না বললেও ভারতের ব্যাপারে তার মনোভাবের কেন্দ্রে রয়েছে মানবাধিকারের ইস্যু। বাকি বিশ্বের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আপনি ভারতকে বুঝতে না পারলে বিষয়টি রাজনৈতিক বয়লার প্লেটের মতো মনে হতে পারে।কারণ ‘মানবাধিকার’কে ‘বিজেপি-বিরোধী’ বলে সবসময় দেখানো হয়। মোদিকে নির্বাচনে হারাতে না পেরে তার দেশীয় সমালোচকরা বলছেন যে তার নীতি ও উস্কানিগুলো সংখ্যালঘু, যেমন ১৮ কোটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে চালিত। যুক্তরাষ্ট্রে কমলা হ্যারিস ক্ষমতায় গেলে ভারতে মোদি-বিরোধীরা তাদের হাতে অনেক বড় একটি অস্ত্র পেতে পারেন।