মেয়ের মারধরের শিকার বৃদ্ধ বললেন, ‘তাকে জেলে দিলে আমাকে দেখবে কে?

ভিডিও থেকে নেওয়া, চাঁদপুরে মনির হোসেন খান (৮০) নামের এক বৃদ্ধকে মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় তাঁর মেয়ে ফাতেমা আক্তার শিল্পীকে (৩৮) আটক করেছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত ফাতেমা আক্তার চাঁদপুর সদর মডেল থানা হেফাজতে ছিলেন।

গতকাল শনিবার রাতে শহরের নিউ ট্রাক রোডের কলমতর খান বাড়ি থেকে চাঁদপুর সদর মডেল থানা-পুলিশ ফাতেমা আক্তার শিল্পীকে আটক করে। ফাতেমা চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের মাস্টার রোলের একজন কর্মচারী এবং ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট পদে কর্মরত। বৃদ্ধ মনির খানের তিন মেয়ে, কোনো ছেলে নেই।

মনির খানের প্রতিবেশী শাহজাহান খান ও তাঁর স্ত্রী গোলশান আরা বেগম বলেন, ‘প্রায় সময়ই তাঁদের ঘর থেকে বাবা-মেয়ের শব্দ শোনা যায়। অনেক সময় মনির খানের কান্নাও শোনা যায়। সম্প্রতি মেয়ের সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে বিবাদ হওয়ায় মনির খানকে বাড়ির বাইরে বিভিন্ন স্থানে বসে থাকতে দেখা যায়। আমরা জানতে পেরেছি, বাবার অপরাধ বিছানায় পেশাব করেছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি নিরুপায়।’

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিওতে দেখা গেছে, বৃদ্ধকে মারধর করছেন তাঁর মেয়ে। তিনি এ সময় ফ্যালফ্যাল করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। শনিবার রাতে কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এই ভিডিও প্রকাশ করা হয়। আগের দিন শুক্রবার সকালে ফাতেমা আক্তার তাঁর বাবাকে গোসল করাতে গিয়ে মারধর করেন। কোনো প্রতিবেশী তখন এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন।

এদিকে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাসুদুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়, ফাতেমা আক্তার শিল্পীকে অনেকেই এই কলেজের শিক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মূলত তিনি মাস্টার রোলের একজন কর্মচারী এবং ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট পদে কর্মরত। তিনি কলেজের শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। ভিডিওটিতে প্রচারিত ঘটনাটি একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়। বিষয়টি বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়াধীন। এ অবস্থায় কলেজ প্রশাসন তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তারপরও কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অধিকতর অবগতির জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির তদন্তের ভিত্তিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ মুসহীন আলম বলেন, ‘ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা ফাতেমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। সকালে তাঁর বাবা থানায় এসেছেন। তিনি এখনো কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি বলছেন, মেয়েকে জেলে দিলে তাঁকে কে দেখবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুলিশ ওই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রেখেছে। পরিবার থেকে অভিযোগ দেওয়া হলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মনির খানের তিন মেয়ের মধ্যে একজন স্বামীসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনিই বাবা-মাকে খরচ দিয়ে থাকেন। আরেক মেয়ে তাঁর স্বামীর বাড়িতে থাকেন। তবে শিল্পীর স্বামী থাকেন সিঙ্গাপুরে। তিনি বৃদ্ধ মা-বাবার সঙ্গে থাকেন।