টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি। যিনি তার সুদক্ষ অভিনয়ের মাধ্যমে অর্জন করেছেন কোটি মানুষের হৃদয়। ২০০৩ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে নায়িকা চরিত্রে অভিষেক হয় তার। ‘চ্যাম্পিয়ন’ নামে এ সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক জিৎ। তবে দর্শকপ্রিয় এই অভিনেত্রী ১৯৯৭ সালে ‘মায়ার বাঁধন’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথম চলচ্চিত্রে পা রাখেন। সিনেমায় তিনি প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন।
চলচ্চিত্রে পা রাখার পর পরই জনপ্রিয় এই নায়িকাকে নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রথমেই তিনি প্রেমের সম্পর্কে জড়ান রাজিব বিশ্বাসের সঙ্গে। রাজিব তখন চলচ্চিত্রে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। একদিকে শ্রাবন্তী যেমন নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাননি, তেমনি রাজিব বিশ্বাসও পরিচালক হিসেবে নিজের জায়গা গড়তে পারেননি। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতেই অর্থাৎ ২০০৩ সালে ঘর বাঁধার সিদ্ধান্ত নেন এই প্রেমিক যুগল। বিয়ের পর দক্ষিণ কলকাতার বিজয়গড়ে বসবাস করতে থাকেন তারা। এ সময় পাড়ার টিউবয়েল থেকে ব্যবহারের পানি পর্যন্ত শ্রাবন্তী-ই বয়ে আনতেন। কারণ নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন অতটা সচ্ছল ছিলো না। ধীরে ধীরে নিজেদের ক্যারিয়ার দাঁড় করান দুজনেই। ভাড়া বাসা থেকে বিজয়গড়ে ফ্ল্যাট কিনেন রাজিব। তাদের সংসার আলো করে আসে পুত্রসন্তান অভিমন্যু (ঝিনুক)।
ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। কিন্তু হঠাৎ এই যুগলের জীবনে ছন্দপতন ঘটে। এরপর আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন শ্রাবন্তী-রাজিব। শ্রাবন্তী পুত্র অভিমন্যুকে নিয়ে বাবা-মায়ের বাসায় চলে আসেন। গুঞ্জন শোনা যায়, শ্রাবন্তীকে শারীরিক নির্যাতন করতেন রাজিব। যদিও এ পরিচালক তা অস্বীকার করেন। বাবার বাড়িতে দীর্ঘ সময় থাকার পর বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন শ্রাবন্তী। ২০১৩ সালে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে উকিল নোটিশ পাঠান শ্রাবন্তী।
এ সময় দারুণভাবে ভেঙে পড়েন রাজিব বিশ্বাস। এক সাক্ষাৎকারে রাজিব বিশ্বাস বলেছিলেন-‘বিজয়গড়ের বাড়িতে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। পুরো বাড়িতে শ্রাবন্তীর এত বড় বড় ছবি, ভীষণ প্রভাব ফেলছে। মনে-প্রাণে চাইছি, বাড়িটি বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যাব।’ সর্বশেষ ২০১৬ সালে তাদের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হয়।
রাজিব বিশ্বাসকে যখন বিবাহবিচ্ছেদের আইনি নোটিশ পাঠান, তখন অন্য কারো সঙ্গে শ্রাবন্তী প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যায়। রাজিব বিশ্বাসও এ কথা স্বীকার করেছিলেন। তবে কার সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন তা জানা যায়নি।২০১৫ সালে মুম্বাইয়ে এক অনুষ্ঠানে মডেল কৃষাণ ভিরাজের সঙ্গে পরিচয় হয় শ্রাবন্তীর। এরপর মনের লেনাদেনা হয় তাদের। এ জুটির প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে শুরুতে নানা গুঞ্জন শোনা যায়।
সর্বশেষ নিজের জন্মদিনে কৃষাণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা জানান শ্রাবন্তী। এক বছর প্রেম করার পর এই যুগল বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৬ সালের ১০ জুলাই ঘটা করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন শ্রাবন্তী-কৃষাণ। টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অধিকাংশ তারকা শিল্পীরা এতে উপস্থিত ছিলেন। পরের বছর বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করলেও তা আর হয়নি। কারণ ৮৫ দিনের মাথায় তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। কৃষাণের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শ্রাবন্তী বলেছিলেন- ‘আমরা দুজন মিলেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বনিবনা না হলে একসঙ্গে মিথ্যা সুখে থাকার কী লাভ। কৃষাণ ভিরাজের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি চাই, সে যেন ভালো থাকে।’
২০১৬ সালে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘শিকারী’ দিয়েই শাকিব খান ও শ্রাবন্তী জুটিকে বড় পর্দায় প্রথম দেখেন দর্শক। ২০১৮ সালে ‘ভাইজান এলোরে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শ্রাবন্তী-শাকিব। আর একই বছরের আগস্টের দিকে গুঞ্জন চাউর হয়, প্রেম করছেন তারা। যদিও এ সম্পর্কের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন শ্রাবন্তী। শাকিব খানও বিষয়টি গুজব বলে উড়িয়ে দেন। তবে এ সময় আরেকটি গুঞ্জন উঠে, শ্রাবন্তী টলিউডের এক নায়কের সঙ্গে প্রেম করছেন। কিন্তু সেই চিত্রনায়ক কে, তা আর জানা যায়নি।
২০১৭ সালে এক বন্ধুর মাধ্যমে রোশান সিংয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় শ্রাবন্তীর। প্রথম পরিচয়ে রোশানের সঙ্গে তেমন কথা হয় না তার। তবে এটুকু জানতেন, রোশান একটি জিমের মালিক এবং একটি বিমান সংস্থার কেবিন ক্রু সুপারভাইজার। এরপর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরার সময় প্লেনে দেখা হয় তাদের। তারপর থেকেই দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বর্তমানে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।