‘বাবা আমাকে সবসময় মা বলে ডাকতেন, আমি এখন কার মা হবো’

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে মোটরসাইকেল আরোহী সেই ভুবন চন্দ্র শীল (৫২) মারা গেছেন।সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার শ্যালক পলাশ চন্দ্র শীল।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর, রাত ১০টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সিটি পেট্রলপাম্প এবং বিজি প্রেসের মাঝামাঝি সড়ক দিয়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে করে বাসায় যাচ্ছিলেন ভুবন চন্দ্র শীল। এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তার মাথা ভেদ করে গুলি বেরিয়ে যায়। শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনক লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীদের করা গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আহত হন ভুবন।

তার স্ত্রী রত্না রানী শীলের আশা ছিল স্বামী ভুবনের জ্ঞান ফিরবে। তাই তো মেয়ে ভূমিকা চন্দ্র শীলকে নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে সিঁড়িতেই বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন তিনি। কিন্তু স্বামীর আর জ্ঞান ফিরেনি। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে মৃত্যু হয় ভুবনের।

এদিন হাসপাতালের দোতলায় দেখা যায়, মেয়ে ভূমিকা জড়িয়ে ধরে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মা রত্না। স্বামীর লাশ বুঝে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। এ সময় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ভুবনের স্ত্রী।

রত্না স্বামী ভুবন হত্যার বিচার চেয়ে বলেন, কারা গুলি করেছে জানি না। আমার স্বামী তো চলেই গেল। কিন্তু যারা তাকে গুলি করেছে, তাদের বিচার যেন হয়। একটাই চাওয়া―কোনো সন্তানের বাবাকে যেন এভাবে আর এত তাড়াতাড়ি পৃথিবী থেকে যেতে না হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভূবনের মেয়ে বলেন, বাবার সঙ্গে সবশেষ ঘটনার আগের রাতে ১২টার দিকে কথা হয়েছিল। বাবা বলেছিল, ক’দিন পরই বাড়ি আসব। তোমার জন্য কী কী আনতে হবে মা।

তিনি আরও বলেন, বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় আমাকে নিয়ে মাঝে মধ্যে বাজি ধরতেন তারা। আমি কাকে বেশি ভালোবাসি, সেটা নিয়েই বাজি ধরা হতো। কিন্তু আমি বাবাকেই বেশি ভালোবাসতাম। আবার বাবা ঢাকায় চলে এলে মাকে আমি সরি বলতাম।

ভুবনের মেয়ে বলেন, ‘এখন কাকে নিয়ে আমি মজা করব। বাবা তো আমাদের রেখে চলে গেলেন। বাবা আমাকে সবসময় মা বলে ডাকতেন। আমাকে এখন কে মা বলে ডাকবে। আমি এখন কার মা হবো।’ভুবনের মৃত্যুর পর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে রাতেই তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি ফেনীর ফুলগাজীতে নেয়া হবে।