বঙ্গবন্ধুকে হ’ত্যার কথা শুনে এখনও বিয়ে করেননি

৮৩ বছর বয়সেও আব্দুল আজিজ ওরফে লেডু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নৌকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। আওয়ামী লীগের কোনো সমালোচনা শুনতে পারেন না।একরোখা স্বভাবের লেডুকে আর্থিক সহায়তা দিয়েও যদি কেউ হাস্যরস করে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন তখনও রেগে যান।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরের মানুষের সাহায্য সহায়তা তিনি নেন না। পুরো জীবন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ বলে কাটিয়ে দিলেন আব্দুল আজিজ ওরফে লেডু। আব্দুল আজিজ ওরফে লেডু ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার গালাগাঁও ইউনিয়নের ধারাকান্দি গ্রামের তাহির উদ্দিনের ছেলে।স্থানীয়রা জানান, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আব্দুল আজিজ লেডুর বিয়ের দিন ছিল। ওই দিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার খবরে ঢাকায় চলে যান লেডু। তারপর আর বিয়ে করেননি তিনি। প্রতিবেশী মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই দেখছি আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধু ছাড়া কিছুই বোঝেন না লেডু।

আওয়ামী লীগের এমন একজন কর্মী হয়েও তাকে অন্যের দোকানের ফ্লোরে থাকতে হয়। তার থাকার ঘরের প্রয়োজন।’ প্রতিবেশী আমজাদ হোসেন তালুকদার (৯০) বলেন, আমার স্পষ্ট মনে আছে লেডুর বিয়ের দিন তাকে গোসল করানো হচ্ছিল। তখন হঠাৎ খবর পেলাম বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হ’ত্যা করা হয়েছে।খবর শুনেই লেডু বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে যায়। এরপর বাড়ি ফিরেছে ১৫-১৬ দিন পর। তারপর আর বিয়ে করেনি লেডু। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৬৯ সালে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন তখন আমি ও লেডু নৌকার মিছিল করেছি। নৌকা নৌকা স্লোগান দিয়েছি। সেই থেকেই আমি আর লেডু আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু ছাড়া কিছুই বুঝি না।

আব্দুল আজিজের ছোট ভাই মো. আব্দুল খালেক বলেন, আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। মায়ের কাছে শুনেছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট লেডু ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। বিয়ের গোসল করানোর সময় খবর আসে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় গোসল রেখে বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন ভাই।এরপর ১৫-১৬ দিন পর বাড়ি ফিরে আসেন। তাকে অনেকবার বিয়ে করানোর চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, কল্পনা আক্তার নামে আমার এক মেয়ে ছিল। কল্পনার মা মা’রা যাওয়ার পর আব্দুল আজিজ তাকে লালন পালন করে বিয়ে দেন। ওই মেয়ের বাড়িতে গিয়ে প্রায়ই থাকেন লেডু।সেখানে যদি না যান তাহলে তারাকান্দা বাজারে শাহিন প্রেস নামে একটা দোকান আছে; সেখানে রাতে ঘুমান। তার থাকার কোনো জায়গা নেই। এ বিষয়ে আব্দুল আজিজ ওরফে লেডু বলেন, ১৯৬৯ সালে যখন বঙ্গবন্ধু নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন তখন থেকে আমি নৌকার ভক্ত।

আমার রাজনীতির শুরু ভাষাসৈনিক মরহুম এম শামসুল হকের হাত ধরে। তার সঙ্গে আমি মিটিং-মিছিল করেছি। তিনি ছিলেন পাঁচবারের এমপি ও একবারের উপজেলা চেয়ারম্যান। তার ছেলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ আমাকে খুব স্নেহ করেন। আমি তার কাছে প্রায়ই যাই। তিনি কোনো দিন আমাকে নিরাশ করেন না।আব্দুল আজিজ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বিয়ের আয়োজন চলছিল। কিন্তু যখন শুনলাম বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হ’ত্যা করা হয়েছে, তখন আমি ঠিক থাকতে পারিনি। বিয়ের আসর থেকে উঠে ঢাকায় চলে যাই। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে মহাখালী, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘোরাফেরা করি।

বঙ্গবন্ধুর কাছে আমি যেতে পারিনি। এর আগে একবার ময়মনসিংহে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু, তাকে আমি সামনে থেকে দেখেছি। তবে কত সালে বঙ্গবন্ধু ময়মনসিংহে এসেছিলেন তা সঠিক জানা নেই। আমি রাজনীতি করেছি, মিছিল করেছি, মিটিং করেছি কিছু পাওয়ার জন্য নয়। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে এসব করেছি।তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার ওরফে রনু ঠাকুর বলেন, আব্দুল আজিজ ওরফে লেডু আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। যেখানে আওয়ামী লীগের সভা-সেমিনার হয় সেখানেই তাকে পাওয়া যায়। এক কথায় নৌকাপাগল লোক তিনি। লেডু চিরকুমার। মূলত বঙ্গবন্ধুকে হ’ত্যার খবর শুনে বিয়ে করেননি লেডু।

প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, আমি বলব না লেডু আওয়ামী লীগের সুবিধাবঞ্চিত কর্মী। তার থাকার কোনো ঘর নেই বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তার থাকার ঘরের ব্যবস্থা করা হবে। স্থানীয় নেতাদের কাছে গেলে তাকে কেউ খালি হাতে ফেরায় না। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ খুব ভালো করেই লেডুকে চেনেন এবং স্নেহ করেন।তার কাছে সবসময় লেডু যান। ঘরের কথা বললেই কাজ হয়ে যাবে। তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আব্দুল আজিজ লেডু মণ্ডলের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তিনি কোনো দিন সরকারি ঘরের জন্য আবেদনও করেননি। তার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে তার বাড়ি যাব। খুব তাড়াতাড়ি তার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করব।