করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশে গার্মেন্টস, মার্কেট, অফিস ও আদালত চলছে আগের নিয়মেই। তবে দীর্ঘ ৮ মাস স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের তথা শিক্ষাব্যবস্থার আমূল ক্ষতি হয়েছে।এভাবে আর কতদিন চলবে? বাংলাদেশ জার্নালকে এভাবেই প্রশ্নগুলো করছিলেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুকাইয়া জান্নাত।তিনি বলেন, সারাদেশে প্রায় দুই কোটি চল্লিশ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই ঝরে পড়বে। এমন উদ্ভূত পরিস্থিতি ঠেকাতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেবে বাংলাদেশে এখন ৬৫ হাজার ৬২০টি বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে ২ কোটিরও বেশি শিশু লেখাপড়া করে। আর এত বিপুল শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করেন তিন লাখ শিক্ষক। এবার সেই শিক্ষকরাই প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার দাবি জানিয়েছেন।এ বিষয়ে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির (ক্ষেতলাল) সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুবর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, রাজধানীতে এখনো মারাত্মক আকারে যানজট, হাটবাজার খোলা এমনকি শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার বালাই কোথাও নেই।
গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রাইভেট টিউশনি কিন্তু চালু রয়েছে। অর্থাৎ কোনো কিছুই থেমে নেই। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে শিক্ষকরা কিন্তু সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। এরপরও শিক্ষার্থী ও শিক্ষার স্বার্থেই বিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি জানান তিনি।সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী (নেপ)। এ বিষয়ে নেপের মহাপরিচালক মো. শাহ আলম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, নতুন করে আমরা ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির কাজ শুরু করেছি।
প্রাথমিকের প্রতিটি ক্লাসের সকল বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণের সক্ষমতা তৈরির লক্ষে নতুন করে এ সিলেবাস তৈরি করা হচ্ছে। নতুন সিলেবাসটি আগামী সপ্তাহে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। আর যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হয়, তবে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পদ্ধতিতে পঞ্চম শ্রেণিসহ সকল ক্লাসের সনদ বিতরণ করবে।
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, কোভিড-১৯ সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইনে শিক্ষা নিচ্ছে। বাকি ৩০ শতাংশকেও দূরশিক্ষণের আওতায় আনতে কাজ করছে সরকার। এজন্য জাতীয় সংসদ টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিওর পাশাপাশি ইন্টারনেট বা স্মার্টফোন না থাকলেও তাদের জন্য ৩৩৩ টোল ফ্রি নম্বরে কল করে শিক্ষকের পরামর্শ নেয়ার মতো উদ্ভাবনী সেবা চালু করা হয়েছে।অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে গেছে ৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল। আগামী বছরের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে আরো ২৫ হাজার স্কুল। চাকরি হারাবেন অন্তত ৫ লাখ শিক্ষক।
তবে শিক্ষাব্যবস্থার যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার উপর জোর দিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ যতিন সরকার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সক্ষমতা এ দেশের এখনো হয়ে উঠেনি তা কিছুদিন আগেই বিশেষজ্ঞ কমিটি মত প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ রেডিও টেলিভিশনে শিক্ষাদানের মত উপযোগিতা এ দেশে এখনো তৈরি হয়নি। সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীকে যেমন বিদ্যালয়ে আসতে হবে তেমনি সরকারকেও বিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতি পুনরায় চালু করার বিষয়ে ভাবতে হবে।