পবিত্র মাহে রমজান এখন আমাদের দোরগোড়ায়। মাসখানেকের মধ্যেই বদলে যাবে বাংলাদেশের নিত্যদিনের চেহারা, জীবনযাত্রা, অফিস সময়। রোজা মুসলমানদের পাঁচ ফরজের একটি। প্রাপ্তবয়স্ক সবার জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক।রমজান আসে সংযমের বারতা নিয়ে। ধর্মীয় কারণ তো বটেই, ইদানীং জানা যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিবেচনায়ও রোজা সবার জন্য উপকারী। এখন অমুসলিমরাও স্বাস্থ্যগত কারণে দিনের একটা বড় সময় উপবাস করছেন। ইসলাম ১৪০০ বছর আগেই রোজা বাধ্যতামূলক করেছে।আমরা সাধারণ মানুষ আনন্দের সাথে সংযমের রমজানটা পালন করতে চাই। আমাদের মাথায় যেন স্রষ্টার সন্তুষ্টির বিষয়টাই থাকে, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ে যেন ভাবতে না হয়। বাজারের চেয়ে প্রার্থনায় যেন
আমাদের বেশি সময় কাটে। রমজানে মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন। তবে শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই রোজা নয়। সবধরনের রিপু থেকে সংযত থাকাও রোজার অন্যতম ফরজ। যিনি রোজা রাখছেন, তার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হচ্ছেই, যারা খাবারের অভাবে খেতে পারছেন না, তাদের কষ্টটাও বুঝবেন আরেক মুসলমান। এটাই রোজার অন্যতম শিক্ষা। ফলে রোজা এমন একটি ফরজ ইবাদত যার বহুমাত্রিক মাজেজা রয়েছে।রোজার সবচেয়ে বড় যে শিক্ষা-সংযম, আমাদের দেশে সেটাই উপেক্ষিত হয় সবচেয়ে বেশি। যেহেতু সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়, তাই রমজানে খাবারের পেছনে খরচ কম হওয়ার কথা। কিন্তু ঘটে উল্টো ঘটনা। রমজানে
খাদ্যপণ্যের পেছনে আমাদের ব্যয় বেড়ে যায়। রোজায় স্বাস্থ্যের যেটুকু উপকার হওয়ার কথা, অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ক্ষতি হয় তারচেয়ে বেশি।সারাদিন না খাওয়ার পর আমরা খালি পেটে ইফতার করি ভাজাপোড়া দিয়ে। রমজানে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ে বাজারে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগই মুসলমান। কিন্তু রমজান এলেই তারা সংযমের বদলে লোভের কবলে পড়েন। হু হু করে বেড়ে যায় জিনিসপত্রের দাম। এবার তো আগে থেকেই বাজারে আগুনের আঁচ।গরীবের প্রোটিন ব্রয়লার মুরগি এবং ডিমের দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে। রমজান এলে অন্যসব নিত্যপণ্যের চাহিদা তো বাড়েই; বাড়ে চিনি, ছোলা, খেজুর, ভোজ্যতেল, মসলা, দুধ, বেগুন, পেঁয়াজ, কাঁচা
মরিচের চাহিদাও। আর চাহিদা বাড়লে বেড়ে যায় দামও।শেষ মুহূর্তে এসে ব্যবসায়ীরা বলেন, চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ বাড়েনি, তাই দাম বেশি। তারওপর এবার আছে ডলারের অস্থির বাজারের প্রভাব। একটা বিষয় কিছুত্বে আমার মাথায় ঢোকে না, রমজান এলে যে নিত্যপণ্যের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়বে এটা তো সবাই জানেন। আর কবে রমজান হবে, এটাও তো সবার জানা। ডলারের বাজারের অস্থিরতা, যুদ্ধের প্রভাব; এসবও কারো অজানা নয়।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মূল কাজই হলো, বাজার মনিটরিং, আমদানি মনিটরিং করা। তাদের তো দেশী-আন্তর্জাতিক বাজারের বিষয়ে তথ্য আমাদের চেয়ে বেশি থাকার কথা। কোন কোন পণ্যের আমদানি বাড়াতে হবে, দাম নিয়ন্ত্রণে কোন কোন
পণ্যের শুল্ক কাঠামো সাময়িকভাবে হলেও বদলাতে হবে; এটা তো তাদেরই জানার কথা। কারণ এটাই তাদের কাজ। কিন্তু আমি জানি, রমজান এলে ঠিকই বাজারে আাগুন লাগবে।ব্রয়লার মুরগি আর ডিমের বাজার রমজানের আগে ঠিক তো হবেই না, আরো বাড়লেও আমি অবাক হবো না। আর রমজানের যে বিশেষ পণ্য তার দামও বাড়বে। শেষ মুহূর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডলারের দাম, আন্তর্জাতিক বাজার ইত্যাদি রেডিমেড অজুহাত দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ পুড়বে বাজারের আগুনে। এমনিতেই বাজারের যে ঊর্ধ্বমুখ প্রবণতা, মধ্যবিত্ত টিকে আছে পুষ্টি স্যাক্রিফাইস করে। রমজান এলে তাদের স্যাক্রিফাইসের তালিকা আরো লম্বা করতে হবে।রমজানে এমনিতেই সঙ্কট
থাকে। আর সেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় অসৎ ব্যবসায়ীরা মানুষের পকেট কাটতে ব্যস্ত হয়ে যান। ব্যবসায়ীরা লাভ করবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু লাভের জায়গা যখন লোভ দখল করে নেয়, সমস্যা হয় তখনই। রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সময় অনেক আগেই ফুরিয়েছে। কিন্তু এখনও একমাস সময় বাকি আছে।এটুকু সময়ের মধ্যেও চাইলে সরবার অনেককিছুই করতে পারে। সরবরাহ পরিস্থিতি যাচাই করে, জরুরি কিছু আমদানি করার সময় হয়তো ফুরিয়ে যায়নি এখনও। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা যাতে কারসাজি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে না পারে, সে জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। স্বাভাবিক নজরদারির সঙ্গে প্রয়োজনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে।
আমরা সাধারণ মানুষ আনন্দের সাথে সংযমের রমজানটা পালন করতে চাই। আমাদের মাথায় যেন স্রষ্টার সন্তুষ্টির বিষয়টাই থাকে, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ে যেন ভাবতে না হয়। বাজারের চেয়ে প্রার্থনায় যেন আমাদের বেশি সময় কাটে।