দুবাইয়ে কাজের নামে বাংলাদেশি তরুণীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা!

পারুল আকতার (ছদ্মনাম), দরিদ্র পরিবারের স’ন্তান পারুল আক্তার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর জীবিকার তাগিদে নাচকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তারপর রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ করতেন।কয়েক বছর আগে এক অনুষ্ঠানে নাচতে গেলে তার সঙ্গে দেখা হয় এক ব্যক্তির। সেই ব্যক্তি দুবাইয়ের একটি ডান্স বারের এজেন্ট। পারুল আক্তার বলেন, ‘ওই লোক আমাকে বলছে, তুমি তো ভালোই নাচ। দুবাই যাইবা? ওইখানে স্টেজে নাচলে মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন পাইবা।

টাকার কথা শুনে আমি রাজি হইলাম।’ দুবাই যেতে পারুল আক্তারের কোনো টাকা খরচ হয়নি। কিন্তু এই বিষয়টিও তার মনে কোনো স’ন্দেহ তৈরি করেনি। দুবাই গিয়ে ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় পারুলকে।তিনি বলেন, ‘এখান থেকে ডান্সের কথা বইলা নিয়া যাইত। পরে ওইখানে ছেলেদের রুমে পাঠানো হয়। ওখানে পরিস্থিতির শিকার।’ পারুল আক্তারের মতো অনেক মেয়েকে এভাবেই দুবাইয়ের ডান্সবারে চাকরি দেওয়ার নামে জোর করে দেহব্যবসায় বা’ধ্য করা হয়েছে।

যেভাবে দুবাইতে পা’চার করা হচ্ছে : ৯ মাস আগে দুবাই ফেরত কিছু না’রীর অ’ভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে তদ’ন্ত শুরু করে নারায়ণগঞ্জের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। নারায়ণগঞ্জে র‍্যাব ১১ এর অতিরিক্ত পু’লিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বলেন, ‘অনেকদিন ধ’রেই আমরা খবর পাচ্ছিলাম যে এখান থেকে কিছু মেয়ে দুবাই আসা যাওয়া করছে। আমাদের কাছে কিছু অ’ভিযোগও এসেছে।

৯ মাস ত’দন্তের পর র‍্যাব কর্মক’র্তা আলেপ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল গত রোববার ছয়জনকে আ’টক করেছে। যারা দুবাইয়ের ‘ডান্স বারে’ না’রী পা’চারের সঙ্গে জ’ড়িত বলে অ’ভিযোগ রয়েছে।এই ছয়জনের মধ্যে একজন পাসপোর্টের দালাল, দুইজন ডান্স বারের এজেন্ট এবং দুই জন ডান্স বারের মালিক। তাদের জি’জ্ঞাসাবা’দের মাধ্যমে র‍্যাব জানতে পারে, পাঁচটি ধাপে দুবাইয়ের ডান্স বারে না’রীদের পা’চার করা হয়।

প্রথম ধাপে রয়েছে এজেন্ট। তাদের কাজ হচ্ছে মেয়েদের টা’র্গেট করা এবং তাদেরকে প্রলো’ভন দেখানো। এর সঙ্গে দুবাই ফেরত কিছু না’রীও জ’ড়িত রয়েছে। কারণ তাদের মুখে ‘আর্থিক সমৃদ্ধির গল্প’ অন্য না’রীদের প্রলুব্ধ করে।দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে পাসপোর্ট করিয়ে দেবার দা’লালচক্র। মেয়েদের রাজি ক’রানো সম্ভব হলে দালালরা তাদের পাসপোর্ট পেতে সহায়তা করে। মেয়েদের ছবি পাঠানো হয় দুবাইতে ডান্স বারের মালিকদের কাছে। র‍্যাব বলছে ছবি দেখে পছন্দ হলে মালিকরা ঢাকায় আসে তাদের দেখার জন্য।’

তৃতীয় ধাপে রয়েছে ট্রাভেল এজেন্ট। তাদের কাছে টুরিস্ট ভিসা পাঠিয়ে দেয় দুবাইয়ের ডান্স বারের মালিকরা। পরবর্তী ধাপে আছে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে কর্মরত কিছু অ’সাধু ব্যক্তি। একজন না’রী ইমিগ্রেশন পেরিয়ে দুবাই যাবার জন্য ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।

র‍্যাব কর্মক’র্তা আলেপ উদ্দিন জানান, একজনকে পাঠাতে দুই লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। যার পুরোটাই বহন করে ডান্স বারের মালিকরা। দুবাইতে পৌঁছানোর পর একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় এসব না’রীদের। তারপর সেখান থেকে কোনো বাড়িতে নিয়ে ব’ন্দী করা হয় এবং দেহব্যবসায় বা’ধ্য করা হয়।আলেপ উদ্দিন বলেন, ‘ত’দন্তে দেখা গেছে একটি ট্রাভেল এজেন্সি শুধু চলতি বছরেই ৭২০ জন তরুণীকে দুবাই এবং মালয়েশিয়া পাঠিয়েছে। এ বিষয়টি র‌্যাবের কাছে বেশ অ’স্বাভাবিক মনে হয়েছে।’

গ্রে’প্তার হওয়া ডান্স বারের মালিক এবং এজেন্টদের কাছ থেকে র‍্যাব জানতে পেরেছে যে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই হাজার না’রীকে ডান্স বারের নামে দুবাই পা’চার করা হয়।‘একটা মেয়েকে দুবাই নিয়ে যেতে ডান্স বারের মালিকের খরচ হয় দুই লাখ টাকা। অথচ তাদের একজনকে দিয়ে ডান্স বারের মালিকরা প্রতিমাসে ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করে’, যোগ করেন র‍্যাব কর্মক’র্তা আলেপ উদ্দিন।