দুপুরে তালাক, সন্ধ্যায় গৃহবধূর আত্মহত্যা

বিয়েবিচ্ছেদ মেনে নিতে না পেরে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কাজি বাড়িতে দু’পক্ষের উপস্থিতিতে বিচ্ছেদের পর সন্ধ্যায় বাবার বাড়িতে ফিরে তিনি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

গৃহবধূ আরিফা খাতুন (২৩) শ্যামনগরের কাশিমাড়ী ইউনিয়নের কাশিমাড়ী গ্রামের দিনমজুর আতাউর রহমানের মেয়ে। পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে একই উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের কাছারী ব্রিজ মোল্যাপাড়ার নেছার আলীর ছেলে ইয়াছিন আলীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। আফরিন সুলতানা নামের তিন বছর বয়সী মেয়ে রয়েছে তাদের।

বনিবনা না হওয়ায় উভয়ের সম্মতিতে বিচ্ছেদ হলেও পরে বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে আরিফা আত্মহত্যা করেন বলে স্বজনদের দাবি।

আরিফার বাবা আতাউর রহমান জানান, স্বামীর অনাদর, অযত্ন আর অবহেলায় বিরক্ত ছিল তাঁর মেয়ে। এছাড়া জনসমক্ষে প্রায়ই নিজ স্ত্রীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন ইয়াছিন। এসব ঘটনার জেরে কোরবানির ঈদের সময় বাবার বাড়িতে আসা আরিফা সংসারে ফিরতে অস্বীকৃতি জানান। বারবার অনুরোধ করলেও স্বামী আরিফাকে সংসারে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেননি। বাধ্য হয়ে গত মঙ্গলবার উভয় পক্ষের সম্মতিতে কাজি বাড়িতে তাদের তালাক সম্পন্ন হয়। জিনিসপত্র ও দেনমোহরের টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসার দুই ঘণ্টা পর সন্ধ্যার আগে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

প্রতিবেশী হাসিনা বেগম জানান, মুখে মুখে সম্মত হলেও বিচ্ছেদে মত ছিল না আরিফার। তালাকনামায় স্বামীর স্বাক্ষরের পর মানসিকভাবে আঘাত পাওয়ার কথা বাড়িতে ফিরে আরিফা তাঁকে জানান বলেও দাবি তাঁর।

আরিফার মা শাহানারা বেগম জানান, বিচ্ছেদের দু’দিন আগে স্বামীর খোঁজে আরিফা শ্বশুরবাড়ির দিকে যান। পথে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন ইয়াছিন তাঁকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি নতুন শ্বশুরবাড়ি থেকে নেওয়া যৌতুকের টাকায় তাঁর দেনমোহরসহ খোরপোষ পরিশোধ হবে। এসব বিষয় জানতে পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া আরিফা বাড়িতে ফিরে বিচ্ছেদে তাঁর সম্মতির কথা জানিয়ে দেন। মেয়ের মৃত্যুর পর ইয়াছিন আলীর বাড়ির কেউ আসেনি বলেও তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

বিচ্ছেদ সম্পন্নের দায়িত্বে থাকা কাজি ইয়াছিন নুরী জানান, দু’পক্ষ সম্মত হওয়ায় তিনি তাদের মধ্যে তালাক করিয়ে দেন। এ সময় আরিফার বাবা ও তাঁর স্বামী ইয়াছিনের চাচা-মামার উপস্থিতিতে ৪৫ হাজার টাকাসহ বিয়ের সময়কার যাবতীয় মালপত্র মেয়ের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলেও তিনি জানান।

ইয়াছিন আলী জানান, আরিফা তাঁর সঙ্গে থাকতে না চাওয়ায় তিনি বিচ্ছেদে সম্মত হয়েছিলেন। মৃত্যুর দু’তিন দিন আগে আরিফার বাবা-মা তাদের বাড়িতে গেলেও আরিফা যাননি বলেও দাবি তাঁর।

জাতীয় মহিলা সংস্থার শ্যামনগর উপজেলা শাখার চেয়ারম্যান শাহানা হামিদ জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কাজি সাহেব ও বিচ্ছেদের সঙ্গে জড়িতরা দু’পক্ষকে বুঝিয়ে সময় নিতে পারতেন। স্বামীর সঙ্গে জেদের বশে মেয়েটি তালাকের বিষয়ে রাজি হলেও মন থেকে তিনি বিচ্ছেদ না চাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।