একসঙ্গে মা ও দুই ছেলের জানাজা, পাশাপাশি কবর

ফেনীর ফুলগাজীর আমজাদহাটে খড়ের গাদার নিচে চাপা পড়ে মারা যাওয়া মা ও দুই ছেলের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ধর্মপুরে এলাকায় একসঙ্গে জানাজা শেষে পাশাপাশি কবরে তাদের দাফন করা হয়েছে।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের ফকির বাড়িতে খড়ের গাদার নিচে চাপা পড়েন বাহরাইন প্রবাসী টিপু আলমের স্ত্রী সুমি আক্তার (৩৫), তাদের দুই ছেলে শাহিদ (৫) ও সিয়াম (২) । পরে তাদের পার্শ্ববর্তী ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। একসঙ্গে তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে ফুলগাজী উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিহতদের মরদেহ এলাকায় পৌঁছালে স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

এর আগে দুপুরের দিকে নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে বাড়িতে যান ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া, ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসিমসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিহতদের দেখতে যান ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার। ইউএনও তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এখানে এসেছি। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে এলাকার অন্যান্যদেরও সচেতন করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুমি আক্তার সকালে গবাদিপশুর জন্য খড় কাটছিলেন। ওই সময় তার দুই ছেলে পাশে খেলা করছিল। হঠাৎ খড়ের গাদা ভেঙে পড়লে দুই সন্তানসহ সুমি খড়ের গাদার নিচে চাপা পড়েন। পরে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর চিকিৎসক মিথিলা কানন ঢাকা পোস্টকে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

মা ও দুই ভাইকে হারিয়ে নির্বাক ১০ বছর বয়সী শিশু সায়েম। সে স্থানীয় একটি নূরানি মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগে অধ্যয়নরত। সুমির আরেক কন্যা সন্তান সুবর্না শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার অসুস্থ শাশুড়ি একসঙ্গে পুত্রবধূ ও দুই নাতিকে হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।রুজিনা আক্তার নামে এক স্বজন বলেন, এমন একটি ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে একটি পরিবারকে পুরো তছনছ করে দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে এ সময়ে সুমির স্বামীও দেশে নেই।

কামাল উদ্দিন নামে আরেক স্বজন বলেন, পরিবারটিকে দেখাশোনা করার মতোও এখন আর কেউ নেই। বেঁচে থাকা দুই সন্তানের জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। নিহত তিনজনকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।

ফুলগাজী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসিম বলেন, সুপারি গাছ দিয়ে মোড়ানো খড়ের গাদা টান দিলে ভেঙে পড়ে। তখন দুই সন্তানসহ সুমি খড়ের গাদার নিচে চাপা পড়েন।