একদিনেই ১৭ লাখ টাকার পাবদা বিক্রি বিদেশফেরত বেনজিরের

প্রবাসে গিয়ে যা আয় করছিলেন তা দিয়ে মন ভরছিল না। তাই বিদেশে যাওয়াটা ঠিক হয়নি বলে মনে করে ফিরে এলেন দেশে। হয়ে গেলেন আবারও বেকার। ব্যবসা শুরু করেছিলেন, কিন্তু আগুনে তাও শেষ করে দিয়েছিল। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হাসানপুরের সেই বেকার যুবক বেনজির এখন সফল।তবে খুব সহজ ছিল না তার সাফল্যের পথ। বেশ চড়াই-উৎরাই পার করে অবশেষে দেশীয় পাবদা চাষ শুরু করেন তিনি। আর তাতেই মিলেছে ব্যাপক সফলতা। গত শনিবার (৩০ অক্টোবর) একদিনেই ১৭ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন বেনজির। তার পুকুরে এখনো কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার মাছ রয়েছে।

বেনজিরের বয়স ২৭ বছর। এখন থাকছেন ডুমুরিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামে। তবে এই গ্রামের সঙ্গে তাদের খুব বেশি সম্পর্ক ছিল না। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে অনেক বছর আগেই বেনজিরের বাবা খুলনার ডুমুরিয়া থেকে পাড়ি জমান নারায়ণগঞ্জে। সেখানে ব্যবসার পাশাপাশি ওষুধের দোকান ছিল। বেনজিরদের তিন ভাইয়ের সবারই বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা নারায়ণগঞ্জে। অন্য দুই ভাইয়ের পথ ধরে বেনজিরও প্রবাস জীবনে পা রাখেন। প্রবাসে সাড়ে চার বছর পার করে ২০২০ সালের শুরুর দিকে দেশে ফেরেন বেনজির। এর কিছুদিন পর নারায়ণগঞ্জে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন লাগে। দোকানপাট সব পুড়ে যায়। হতাশা যখন বেড়েই যাচ্ছিল তখন তারা সিদ্ধান্ত নেন শেকড়ে ফেরার। ফিরে আসেন হাসানপুরে।

বেনজির বলছিলেন, অন্য দুই ভাইও দেশে ফিরে এসেছে। সবাই মিলে আমরা এখন হাসানপুরেই থাকি। অন্য দুই ভাইও মাছ চাষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। বেনজিরের পুকুরটা প্রায় ৭০০ শতক জায়গায়। সরকারি ওই জলাশয়টা বছরে প্রায় ৪ লাখ টাকা হারে তিনি পাঁচবছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। সঙ্গে আলাউদ্দীন নামে তার এক স্বজন অংশীদার হিসেবে আছেন। ওই স্বজনের আগে পাবদা চাষের অভিজ্ঞতা ছিল।

তাদের মৎস্য খামারে স্থায়ীভাবে চারজন এবং অস্থায়ীভাবে প্রতিদিন আরও দুই-তিন জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।গত শনিবার মৌসুমে প্রথমবারের মতো মাছ ধরেছেন বেনজির। সকাল থেকে পুকুরের আশপাশ এলাকায় ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। মাছ ধরা দেখতে গ্রামের মানুষের পাশাপাশি হাজির হন উপজেলা মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারা। ভারতে পাবদা মাছ রপ্তানিকারকরা সেদিন তার কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকার মাছ কিনেছেন।

শুরুর কথা জানাতে গিয়ে বেনজির বলছিলেন, আমি আগে জীবনে কখনো কোনো ধরনের মাছ চাষ করিনি। তবে হাসানপুর এলাকায় বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ হয়ে থাকে। আর এখানকার বেশিরভাগ মানুষ চিংড়ি এবং কার্প জাতীয় মাছের চাষ করেন। আমার ইচ্ছে ছিল ব্যতিক্রমী কিছু করার। উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করার পর তারা পাবদা চাষের পরামর্শ দেন এবং সেই মোতাবেক চারদিনের প্রশিক্ষণও দেন। মৎস্য দপ্তরের পরামর্শ মতো পাবদার সঙ্গে নানা প্রজাতির কার্পও চাষ হয়েছে। সেসব মাছও অনেক বড় বড় হয়েছে। সবমিলিয়ে গত ছয় মাসে ২২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। একদিনেই ১৭ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। যে মাছ আছে তাতে কম করে আরও ৫০ লাখ টাকার বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

দেশে ফিরে মাছ চাষে সফল হওয়া বেনজির বলেন, দেশে চাকরি-বাকরি নেই, তাই জায়গাজমি বিক্রি করে হলেও বিদেশে যেতে হবে- বহু বেকার তরুণ ও যুবক এই ভাবনা নিয়ে এখনো বসে থাকেন। বিদেশে শ্রমিকের কাজ করতে যে টাকা লাগে, তাই দিয়ে দেশে বসেও যে ভালো কিছু করা সম্ভব- আমি এখন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। বিদেশ থাকার চেয়ে এখন আমি অনেক ভালো আছি।

ডুমুরিয়ার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, করোনাকালে দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য দপ্তর বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়। বিদেশফেরত বেনজির আমাদের কাছে এসে মাছ চাষের আগ্রহের কথা জানালে আমরা তাকে পাবদা চাষের পরামর্শ দিই। সঙ্গে তার একজন স্বজন যার আগে পাবদা চাষের অভিজ্ঞতা ছিল তার সঙ্গে ট্যাগ করে দিই। ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ (দ্বিতীয় ফেজ) প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণসহ বেনজিরকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়। এখনো পর্যন্ত তারা ব্যাপক সফল।