দেশের উত্তরের জনপদ দিনাজপুর ও আশপাশের জেলায় হঠাৎ করেই জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। গত তিন দিন ধরে হঠাৎ করেই তাপমাত্রা মাপনযন্ত্রের পারদ নিচে নেমে আসায় অব্যাহত গরমের পর অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। রাতে বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ করে দিয়ে শীতের গরম কাপড় বের করতে শুরু করেছেন এ জনপদের মানুষ। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত মঙ্গলবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মাসের প্রথম দিনে দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলে হঠাৎ ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা।
এ অবস্থায় গত বুধবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে আসে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং বৃহস্পতিবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এ পর্যন্ত এই শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানান তোফাজ্জল হোসেন। তিনি জানান, শুক্রবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গত বছর ৬ নভেম্বর দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর গত শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি জানান, চলতি বছর ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যা হয়েছে। তাই মাটি আর্দ্র ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য বেশি। এ কারণেই গত শীত মৌসুমের তুলনায় এবার বেশি শীত অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত কয়েক দিন আগে এই অঞ্চলে তীব্র গরম অনুভূত হলেও হঠাৎ করেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত তীব্র শীত অনুভূত হওয়ায় শীতের গরম কাপড় বের করতে শুরু করেছেন এ অঞ্চলের মানুষ। সন্ধ্যা থেকে সকাল অবধি ঘনকুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়ছে এ জনপদের বিভিন্ন এলাকা। সকালে সূর্যের দেখা মিলছে অনেক বেলা হওয়ার পর। সকালবেলা শিশিরে ভিজে যাচ্ছে ঘাসসহ মাঠের বিভিন্ন ফসল।
দিনাজপুর শহরের সাহেব আলী জানান, বৃহস্পতিবার দিনে গরম অনুভূত হওয়ায় তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন হাফশার্ট পরে। কিন্তু রাত ১০টায় যখন তিনি বাড়ি ফিরছিলেন তখন তীব্র শীতের কারণে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছিল। তীব্র শীতে মোটরসাইকেল নিয়ে এগোতেই পারছিলেন না তিনি। এমন শীত পড়বে, তিনি তা ভাবতেই পারেননি বলে জানান। একই শহরের ফখরুল ইসলাম জানান, গত তিন দিন আগেও রাতে বৈদ্যুতিক পাখা (ফ্যান) চালু করে ঘুমাতে হয়েছে। কিন্তু বুধবার রাতে ফ্যান তো দূরের কথা হঠাৎ করেই তীব্র শীতের কারণে গত শীত মৌসুমের পর বাক্সবন্দি থাকা কম্বল বের করতে হয়েছে তাকে।
তিনি জানান, এবার আগেভাগেই হঠাৎ বেশ শীত অনুভূত হওয়ায় এই শীত মৌসুমে তীব্র শীতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই রকম কথা জানান এ জনপদের মানুষ। শুক্রবার সকালে এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকালে চাদর অথবা গরম কাপড় মুড়িয়ে কাজে বের হয়েছেন গ্রামীণ জনপদের খেটেখাওয়া মানুষ।