শুধু বাবা দিবস এলেই যে আব্বাকে মনে পড়ে আমা’র কাছে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। আমা’র জীবনজুড়ে জড়িয়ে আছেন আমা’র আব্বা।সবাই বলেন, আমি নাকি আমা’র আব্বার আদর্শে বেড়ে উঠেছি; কিন্তু আদৌ কি আমি আব্বার আদর্শে বেড়ে উঠতে পেরেছি? এটি আমা’র নিজের কাছেই নিজের প্রশ্ন।আমা’র বিয়ের মাত্র চার মাস পরই আমা’র আব্বা এএসএম নিজাম উদ্দিন আতাইয়ুব ই’ন্তেকাল করেন। যে কারণে মানসিকভাবে সেই সময় অনেক ভেঙে পড়েছিলাম।বাবাকে ঘিরে প্রত্যেক
সন্তানেরই অনেক স্মৃ’তি থাকে। আব্বা সবসময় আমাদের ছয় ভাইবোনকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা বলতেন। আমা’র জীবনের সাফল্যের মূলমন্ত্র কিন্তু তার কাছ থেকেই পাওয়া।
এই যে আমি এত পরিপাটি থাকি, গুছিয়ে থাকার চেষ্টা করি, এটি তার কাছ থেকেই পাওয়া। তিনি যখন অফিস থেকে আসতেন তখন আম’রা সবাই তাকে পান বানিয়ে খাওয়াতাম। তিনি তখন বেশ আয়েশ করে পান খেতেন। তার পা টিপে দিতে দিতে তখন সব আবদার করতাম। তিনি আমাদের সেই আবদার রাখতেন।আব্বা অনেক
সিনেমা দেখতেন। সিনেমা দেখে দেখে আমাদের মজার মজার গল্প বলতেন এবং সেসব গল্পে তিনি আমাদের অ’ভিনয় করতে বলতেন। সেখান থেকেই কিন্তু অ’ভিনয়ে আসার অনুপ্রেরণা পাই। পরবর্তী সময়ে যখন আমি সিনেমা’র নায়িকা হিসেবে কাজ শুরু করি, তখনও তিনি আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিতেন।
সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় অ’ভিনয়ের আগে আব্বাই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান করতেন ইংরেজিতে। শুটিংয়ের সময় সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তার চ’মৎকার একটি স’ম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।আমা’র ইংরেজি শেখার খুব শখ ছিল বলে আব্বা আমাকে ছোটবেলায় একটি ডিকশনারি কিনে দিয়েছিলেন। আমি তখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ি। বাগেরহাটে থাকি আম’রা।সবাই আমাকে রেখে মামা’রবাড়ি যাবে বেড়াতে। আমি বুদ্ধি করলাম কী’ভাবে আব্বাকে রাজি করানো যায়। তিনি
সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় ফেরার সময় আমিই হারিকেন নিয়ে তাকে এগিয়ে আনতে গেলাম। আমাকে দেখে তিনি ভীষণ খুশি, কারণ তখন বিদ্যুৎ ছিল না। অন্ধকারে আব্বাকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলাম।তিনি তখন খুশি হয়ে বললেন কী’ চাও মা? আমি বললাম আমাকেও মামা’রবাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। তিনি রাজি হলেন। আব্বাই আমা’র জীবনের আদর্শ। তাই আমা’র ইচ্ছা আমা’র মৃ’ত্যুর পর বনানী কবরস্থানে তার কবরেই যেন আমাকে দাফন করা হয়।লেখক : প্রখ্যাত অ’ভিনেত্রী