৫ টি গরু দিয়ে শুরু খামারে এখন দুই কোটি টাকা দামের ৯৬টি গরু!

দিনাজপুরের হিলির সাতনি চারমাথা বাজারে উন্নত জাতের গরুর খামার দিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন মাহফুজার রহমান বাবু। পাঁচটি বিদেশি গরু দিয়ে খামার শুরু করেন, এখন খামারে ৯৬ টি গরু রয়েছে তার। খামারে সব চেয়ে বড় আকারের পাঁচটি গরু আছে যা ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন খামার ব্যবসায়ী বাবু।খামার ঘুরে দেখা গেছে, ফিজিয়াম ও শঙ্কর জাতের ৬০ টি গাভি ও ৩৬ টি বাচুরসহ আড়া গরু রয়েছে। উন্নতমানের শেটে রেখে গরুগুলোকে লালন-পালন করা হচ্ছে। প্রতিটি গরুর মাথার উপর ফ্যান রয়েছে। পানি নিংস্কাশনের সুব্যবস্থা আছে। মলমুত্র সহজেই পরিস্কার করা হয়। প্রতিদিন খামারে ৮ হাজার টাকার ভুষি, ফিট ১ হাজার, ভুট্টা ২ হাজার ও ৫ হাজার টাকার ঘাস মোট ১৬ হাজার টাকার খাদ্যের প্রয়োজন হয় এই খামারে।

খামার পরিচার্য করা জন্য ৮ জন শ্রমিক রয়েছে। দিনে ৫ জন ও রাতে ৩ জন শ্রমিক। ঘাস কাটার মেশিন রয়েছে, তা দিয়ে সহজে ঘাস ও খড় কাটা হয়। একজন পশু ডাক্তার আছেন। তিনি প্রতিদিন একবার এসে গরুগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যান। বর্তমান খামারে গরুর কোন রোগ-বালাই নেই, প্রতিটি গরু সুস্থ্য রয়েছে।প্রতিদিন এক একটি গাভি ১০ থেকে ১২ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। তা থেকে প্রায় ৫ মণ দুধ সংগ্রহ হয়। পার্শ্ববর্তী বিরামপুরে ব্র্যাক অফিসে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে এই দুধ বিক্রয় হয়। খামারের গরু থেকে যে গবর পাওয়া যায়, সেই গবরগুলো ট্রাক্টর বোঝায় ১৫০০ টাকা ও পাওয়ার টিলা বোঝায় ৫০০ টাকা করে বিক্রি হয়।

খামার শ্রমিক আব্দুর রহিম বলেন, আমরা এই খামারে আট জন শ্রমিক রয়েছি। দিনে পাঁচ জন ও রাতে তিন জন খামার পরিচার্য করি। দিনে আমরা যারা কাজ করি তারা মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতন পাই। আর রাতে অনেকেই ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেয়ে থাকি। খামারে নিয়োজিত ডাক্তার শ্রী দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, এই খামারের আমি নিয়মিত ডাক্তার।

প্রতিদিন একবার করে খামারে এসে গরুগুলো দেখা-শুনা করে যায়। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ঔষুধ দিয়ে যায়। বর্তমান খামারের সব গুরু ভাল আছে। কোন রোগ-বালাই নেই। খামার মালিক মাহফুজার রহমান বাবু জানান, লাভ বা ব্যবসায়ী হিসেবে আমি এই খামার তৈরি করেছি। আট বছর আগে প্রথমে ৫টি উন্নত জাতে বিদেশি গরু দিয়ে এই খামার শুরু করি।

পরে আস্তে আস্তে আরও গুরু আমদানি করি। বর্তমান আমার খামারে ৯৬টি গরু রয়েছে। আরও বেশি ছিলো সেগুলো বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটি গাভি বছরে একবার করে বাচ্চা দিয়ে থাকে। খামারে প্রতিদিন মোট ব্যয় হয় প্রায় ১৮ হাজার টাকা এবং দুধ ও গবর থেকে আয় প্রায় ১২ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, খামার ব্যবসা করে আমি নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছি। প্রতি বছর কোরবানি ঈদে ভাল দামে গরু বিক্রি করে আসছি।এলাকার অনেক বেকার যুবক আমার খামার দেখে খামার তৈরিতে আগ্রহ হচ্ছে এবং খামার সম্পর্কে জানতে চায়। অনেকেই আবার দুই চারটা করে দেশি-বিদেশি গরু কিনে বাড়িতে খামার তৈরি করছে। আমার খামারে বর্তমান প্রায় ২ কোটি টাকার গরু রয়েছে। এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা: আব্দুস সামাদ জানান, হিলি সাতনি চারমাথা বাজারে মাহফুজার রহমান বাবুর গরুর খামারটি এলাকার একটি আলোচিত খামার।

এখানে প্রায় সবগুলো গরুই উন্নত জাতের। আমরা প্রতিনিয়ত পশু হাসপাতাল থেকে তার খামারকে সহযোগীতা করে আসছি। নিয়মিত টিকা প্রদান এবং ভিটামিন জাতীয় ঔষুধ দিয়ে আসছি। পশুসম্পদ বিভাগ থেকে এই খামার সকল সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি হিলির এই খামারটিকে একটি মডেল খামার করে দেশের কাছে তুলে ধরবো। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।