২৩ লক্ষাধিক টাকার খাঁটি গুড় বিক্রি করেন বাঁধন

‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা নিজের পরিচয়ে পরিচিত হব। তাই অন্য কোনো পেশার চেয়ে ব্যবসাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে এটা একটা স্বাধীন পেশা। এখানে নিজ পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার সুযোগ আছে। তাই নিজেকে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়েছি। পরিবার থেকে নেওয়া অর্থগুলো বিনিয়োগ করে জলে গেছে। তবুও থেমে থাকিনি। নিজের মধ্যে আগ্রহ ধরে রেখেছি। বারবার চেষ্টা করে গেছি।’ কথাগুলো বললেন হার না মানা এক সফল তরুণ নারী উদ্যোক্তা মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন।

তিনি ‘বাঁধন ফুড’র সত্ত্বাধিকারী ও উইমেন অ্যান্ড ই-কর্মাস ফোরাম-উই’র রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি। তার বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার বজরাপুর এলাকায় হলেও বর্তমানে থাকেন রাজশাহীর রাজপাড়া থানার পুলিশ লাইন এলাকায়। তিনি জেলার পবা থানার হাট রামচন্দ্রপুর ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রিতে পড়াশোনা করছেন।

তরুণ নারী উদ্যোক্তা মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন বলেন, ‘বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরও আমি হাল ছেড়ে না দিয়ে বরং শক্ত হয়ে চেষ্টা করেছি। এভাবেই চেষ্টা করতে গিয়ে উই গ্রুপে যুক্ত হই। সেখানে যুক্ত হয়ে নতুন উদ্যোগের উৎসাহ পাই। ব্যবসা করে সফলতা অর্জন করার মত আইডিয়া বা কনসেপ্ট পাই। সেটা নিয়ে অগ্রসর হই। গ্রুপে প্রথমে রাজশাহীর বিখ্যাত আম নিয়ে পোস্ট দেই। তাতে ভালো সাড়া পাই।’

এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমের মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই চিন্তা করি নিজের ব্যবসাকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায়। সেই চিন্তা থেকেই মাথায় আসে ভেজালমুক্ত খাঁটি খেজুর গুড়ের। যেই চিন্তা; সেই কাজ। শুরু করে দেই গুড় নিয়ে কাজ। হতাশ হতে হয়নি। আমের মতই বরং বলা যায়, তার চেয়েও বেশি সাড়া ফেলে খেজুরের গুড়। শুধু আম যেখানে বিক্রি হয় এক লাখ টাকার মত সেখানে প্রায় ২৩ লক্ষাধিক টাকার খাঁটি খেজুরের গুড় বিক্রি করি। মাত্র ৩ মাসে প্রায় পনেরো হাজার কেজিরও বেশি খেজুরের গুড় বিক্রি হয়।’

আম আর খেজুরের গুড়ের পাশাপাশি তিনি ঘরোয়াভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন রকমের খাঁটি মসলা, দেশি হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের মাংস, মেশিনের ও গরুর ঘাঁনিতে ভাঙা সরিষার তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে থাকেন। এদিকে স্পেশ্যাল আইটেম হিসেবে তার নিজস্ব পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঝালমুড়ি মশলার বিক্রিও চলে। যা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ফলে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু করে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ রমজান মাস পর্যন্ত শুধু ঝালমুড়ির মশলা বিক্রি করেছেন প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার।

সফল নারী উদ্যোক্তা বাঁধন বলেন, ‘নারীরা কেন পুরুষের আয় রোজগারের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে বাড়িতে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে? সেটা আমার কাম্য নয়। এই আদি প্রথাকে ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছি। আমি আমার সংসারের দায়িত্ব নিয়েছি। ছেলে-মেয়েদের ব্যয়ভার গ্রহণ করেছি। আমি মনে করি, পুরুষ যদি স্বামী হিসেবে স্ত্রী আর সন্তানদের দায়িত্ব নিতে পারে; তবে নারী কেন স্ত্রী হিসেবে স্বামী ও সন্তানদের দায়িত্ব নিতে পারবে না?’

এখনো সফল উদ্যোক্তা হতে পারিনি মন্তব্য করে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার শেখার এখনো বাকি আছে। অনলাইনে সফল উদ্যোক্তা হতে হলে যেসব জ্ঞান, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন; সেসব এখনো পূর্ণতা পায়নি। অর্জন করতে পারিনি।’লেখক: ফিচার লেখক