১২০ বিঘা বিশাল জমির শস্যচিত্রের ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নিভৃত পল্লী ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠেই তৈরি হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর এই প্রতিকৃতি ফুটে উঠেছে। ১২০ বিঘা জমির বিশাল ক্যানভাসে নিখুঁতভাবে ভেসে উঠেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’। যা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বাংলাদেশের জন্য নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে। এখন অনেকের মনে ঘোরপাক খাচ্ছে এই ধানগুলো শতবর্ষ উপলক্ষে কি গরীব অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হবে নাকি কি করবে। মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের সহযোগিতায় ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষি ও কৃষকের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শস্যচিত্রে ফুটিয়ে উঠেছে তবে আরো নিখুঁত ভাবে তুলতে চলছে কর্মযজ্ঞ। আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ বীজতলার মাঝথেকে আগাছা উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কথা হয় কাজে ব্যস্ত কৃষকের সঙ্গে তিনি অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, মজুরির টাকার জন্য নয়, জাতির জনকের শস্যচিত্রে ফুটিয়ে তোলার কাজে অংশ নিতে পেরে তিনি খুবই খুশি।

প্রকল্পে লিজ দেওয়া জমির মালিক আঁশগ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে তাঁর ছয় বিঘা জমি রয়েছে। ‘আমার জমির মধ্যেই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনকের প্রতিকৃতি। তা-ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় হবে এটি। গিনেস বুকে স্থান পাবে। সেখানে বঙ্গবন্ধু, দেশ ও আমাদের এলাকার নামও উঠবে, যা কোনো দিন ভাবতেও পারিনি। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’

এদিকে চিত্রকর্মটি সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাস্ত বায়নকারী ওই কম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি তৈরি করার জন্য দুই ধরনের ধান বেছে নেওয়া হয়েছে। বেগুনি ও সোনালি রং। চীন থেকে এই ধানের জাত আমদানি করা হয়েছে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী এই নিভৃত পল্লীর বালেন্দা গ্রামে ৪০ একর জমি লিজ নেওয়া হয়। পরে ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের নিয়ে লে-আউট তৈরি করা হয়। চারা লাগানোর জন্য নির্ধারিত মাঠ প্রস্তুত করা হয়। এই কাজে ১০০ বিএনসিসি সদস্যের দল নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে উঠায় অনেক দর্শনারী এখানে আসে। উঁচু থেকে এই ৪০ একর জমিজুড়েই রোপণ করা ধানের দৃশ্যে জাতির পিতার প্রতিকৃতি ধরা পড়েছে।

বাস্তবায়নকারী কম্পানির ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান বলেন, এই শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর আয়তন হবে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। শস্যচিত্রের দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার এবং প্রস্থ হবে ৩০০ মিটার, যা হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র। কারণ সর্বশেষ ২০১৯ সালে চীনে তৈরি শস্যচিত্রটির আয়তন ছিল আট লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ বর্গফুট। তাই এই চিত্রকর্ম সম্পন্ন হলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পাবে। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হিসেবে উদ্বোধন করা হবে। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গিনেস বুকে স্থান পেয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। জাতির জনকের জন্মশতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতেই কৃষি ও কৃষকের বঙ্গবন্ধুর বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রতিকৃতি।

উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু এটা দেশ ও জাতির জন্য এটি হবে মুজিববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার। অজপাড়াগাঁয়ে এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। আর খবরটি পত্রিকার মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছে। তারা একনজর জাতির জনকের প্রতিকৃতি তৈরির কর্মযজ্ঞ দেখে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উচ্চফলনশীল দুই ধরনের ধানের চারা রোপণের মাধ্যমে এই কর্মযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এতে সভাপতি ছিলেন। এর পর থেকে চারা রোপণের মাধ্যমে দিগন্তজুড়ে মাঠের কাদার এই ক্যানভাসেই বঙ্গবন্ধুকে আঁকছেন কিষান-কিষানিরা, বিশেষভাবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের কিষান-কিষানিরা। রঙিন চারায় বঙ্গবন্ধুকে ফুটিয়ে তুলতে পুরোদমে এই চিত্রকর্মের কাজ একও চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।