সালমান খানের রাধে কিংবা এলএসডির পরিণতি

সালমান খানের রাধে চলচ্চিত্রটা নাকি অনেকের কাছেই ভালো লাগেনি। আমিও ধরে নিয়েছিলাম হয়তো আসলেই ভালোই হয়নি। কিন্তু ছবিটা দেখতে বসে একটু বিরক্ত হইনি। টানা দেখে গেছি। চমৎকার বিষয়ের ওপর একটি ছবি।কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছেলে ঈদ শেষে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরে। ওইদিনই সে পাগলের মতো আচরণ করে আত্মহত্যা করে। ‘আমাকে মাফ করে দিও…’ এই বাক্য বলতে বলতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের এক ডাব বিক্রেতার দা দিয়ে নিজের গলা কেটে ফেলে। ওই অবস্থায় পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও রিকশা থেকে লাফ মারে। গলাকাটা অবস্থা ঘুরে বেড়াচ্ছে, অদ্ভুত আচরণ করছে, শেষ পর্যন্ত মারা যায় ছেলেটি৷

ছেলের নাম হাফিজুর, পরিচয় পাওয়া যায় ৮ দিন পর৷ কেন ওইভাবে আত্মহত্যা করে ছেলেটি? এটার উত্তর পাওয়া গেল আরো কয়েকদিন পর৷ কার্জন হলে ছেলেটিকে ‘এলএসডি’ খাইয়েছিল তার বন্ধুরা। হুমায়ূন আহমেদ তার একটা বইয়ে এই এলএসডির কথা লিখেছিলেন। কলকাতার কয়েকটা বইয়ে পড়েছিলাম এই নেশার কথা। পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু সাহস করে উঠতে পারে না।

এলএসডি খেলে কী হয়?এলএসডি নেয়ার পর সাধারণত মানুষ ‘হ্যালুসিনেট’ করে বা এমন দৃশ্য দেখে যা বাস্তবে নেই। অনেক সময় অলীক দৃশ্য দেখার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে মানুষ।বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ভাষ্য অনুযায়ী এটি মানুষের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের কার্যক্রম প্রভাবিত করে ব্যবহার, অনুভূতি এবং পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন করে।এলএসডি গ্রহণ করে ভুল রাস্তা দেখে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া, বাড়ির জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া বা অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার বেশ কিছু ঘটনা নথিবদ্ধ রয়েছে।

ইউরোপের বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট রিসার্চগেইট’এ ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ১৯৫৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় মোট ৬৪ জনের মৃত্যু হয় এলএসডি গ্রহণের পরবর্তী জটিলতায়।বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তায় ভোগা ব্যক্তিরা এলএসডি গ্রহণের পর আরো বেশি বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হতে পারেন বলেও উঠে এসেছে অনেক গবেষণায়।

এটা গ্রহণের পর অনেকে মনে করেন যে তিনি সবকিছু পরিষ্কার দেখছেন এবং তার শরীরে অতিমানবিক শক্তি এসেছে। এরকম বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার ফলেও অনেকে নানা ধরণের দুর্ঘটনা শিকার হতে পারেন।অতিরিক্ত আতঙ্কের কারণে মানুষ অনেক সময় মনে করতে পারে যে সে শীঘ্রই মারা যাবে বা মারা যাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতেও মানুষ আতঙ্কের বশবর্তী হয়ে নানা ধরণের কাজ করে থাকে যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আতঙ্কিত হওয়ার পাশাপাশি অতি দ্রুত অনুভূতির পরিবর্তন হওয়ার কারণেও মানুষ মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করতে পারে বলে বলছে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন।সংস্থাটি বলছে এলএসডি গ্রহণের আগে এটা বোঝা সম্ভব নয় যে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন হতে যাচ্ছে।এছাড়া এলএসডি মানুষের শরীরে বিভিন্ন রকম প্রভাব ফেলে থাকে।এলএসডি নেয়ার ফলে মানুষের হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, অতিরিক্ত ঘাম সহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যাও তৈরি হয় বলে জানাচ্ছে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন।

ঠিক এমন একটা বিষয় নিয়ে রাধে সিনেমাটি৷ মুম্বাইয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এলএসডি নেওয়া শুরু করে৷ তাদের নিকট এই নেশা পৌঁছে দেয় অতি মুনাফালোভি একটি চক্র। যার ফলে একের পর এক অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকে। এই সময় সাসপেন্ডেড পুলিশ অফিসার ও এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট রাধেকে নিয়ে আসে। রাধে এক স্কুল শিক্ষার্থীকে কথা দেয় যে মাদকব্যবসায়ীদের নির্মূল করবে। এবং সে কথা রাখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর নিজের প্রাণ দিয়ে জানান দিয়ে গেল এলএসডির ভয়াবহতা। জানি না, এটা কতটা শক্তহাতে বিনাশ করতে পারে আমাদের প্রশাসন। পাশাপাশি আমাদের তরুণ,কিশোরদের দৃঢ়চেতা মনোভাবী হতে হবে। না হলে সম্ভাবনাময় অনেক প্রাণ নিঃশেষ হয়ে যাবে। কেননা, আমাদের কোনো রাধে নেই, বাস্তবেও কোনো রাধে নেই। নিজেকে নিজে না বাঁচাতে পারলে কেউ পারবে না।