সাঈদের মৌমাছি পরিবার, এক ঘরেই ২৬ চাক!

নিরিবিলি পরিবেশে ছায়া ঘেরা গ্রামের মধ্যে দুই তলা বাড়ি বানিয়ে বসবাস উপযোগী করে তুলেছিলেন দেবহাটা উপজেলার কোঁড়া গ্রামের আবু সাঈদ। পেশায় তিনি মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী। গত ৮ বছর আগে কষ্ট হলেও বাড়িটি তিনি রঙ করে দৃষ্টি নন্দনও করে তোলেন। নতুন বাড়িতে উঠতেই কোথা থেকে পঙ্গপালের মতো উড়ে এসে এক প্রকার দখল করে নেয় মৌমাছির দল। রাতারাতি হাজার হাজার মৌমাছি একে একে ২৬টি মৌচাক তৈরি করে দুই তলা বাড়ির চারিদিকে।

উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের কোঁড়া গ্রামের মৃত. শেখ মুনসুর আলীর ছেলে আবু সাঈদ জানান, তার বাড়িতে টানা ৮ বছর বাসা বাধে বাড়িটি এক প্রকার দখলে রেখেছে মৌমাছি। বাড়ির বেলকনিসহ বাড়ির চারপাশে ২৬টি বড় বড় মৌমাছির চাক সৃষ্টি করে আছে। পুরো বাড়িটিকে ঘিরে রাখায় প্রথম দেখাতেই যে কেউ ভয়ে আঁতকে ওঠে। দেখতে অন্যরকম লাগায় এলাকার মানুষের কাছে বাড়িটি এখন মৌমাছির বাসা। বাড়ির মধ্যে বসবাস করায় তকে অনেকেই মৌমাছি পরিবার বলেও চিনে থাকে।

আবু সাঈদ বলেন, বছর আষ্টেক আগে হঠাৎ বাড়ির বিভিন্ন স্থানে মৌমাছির চাক দেখা যায়। বাড়ি ঘর জুড়ে হাজার হাজার মৌমাছি ঘুরতে থাকে। হুল ফুটাতে পারে এমন আশঙ্কায় প্রথম প্রথম ভয় লাগলেও এখন আর সমস্যা হয় না। তবে দিন রাত ভোঁ ভোঁ শব্দে বিরক্ত লাগলেও বছরে লাখ টাকার মধু সংগ্রহ করার আনন্দে মৌমাছির বিরক্তটাও যেন মধুর লাগে। সত্যিই মৌমাছিদের নিয়ে পরিবার আমার।

তিনি আরো বলেন, দ্বিতলা বিশিষ্ট বাড়ির বেলকনি, কার্নিশ, দেওয়ালসহ বিভিন্ন স্থানে মৌমাছি চাক তৈরি করে আছে। প্রতি বছরই মৌমাছির দলের আগমনের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর এসেছে ২৬টি মৌমাছির দল। গত ৮ মাসে দুইবার মৌমাছির চাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। মধু ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করা মধু কিনে নিয়ে যায়। বছরে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মধু বিক্রি হয়। এ ছাড়া আত্মীয়-স্বজনরা নেয়। এলাকার বিভিন্ন মানুষ তাদের প্রয়োজনে খাঁটি মধু সংগ্রহ করে আমাদের কাছ থেকে।

শেখ আবু সাঈদের স্ত্রী রনজিলা বেগম বলেন, মৌমাছিগুলো অনেক সৌখিন আর শৃঙ্খল প্রাণী। প্রথম দিকে হুল ফুটাতে পারে এমন ভয় পেলেও এখন আর ভয় লাগে না। মৌমাছি আমাদের কাউকে আক্রমণ করে না, কামড়ায় না। তিনি আরো বলেন, মাছি গুলো বাড়ির সন্তানের মতো মনো হয়। একবার কে বা কারা চুরি করে এসে মৌচাকে বিষ স্প্রে করে। তাই অনেক মাছি মারা যায়। এসময় মাছিরা এক রাতের মধ্যেই অন্যকোথাও উড়ে চলে যায়। পরের বছর আবারো সেই জায়গায় মৌমাছিরা এসে বাসা বাধে। মাছির কারনে গৃহস্থলির কাজে কোন সমস্যা হয় না। আমরা এই চাক থকে প্রতিবছর অনেক মধু পাই। চাক থেকে সংগ্রহ করা মধু নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বিক্রি করি। মাছিগুলো আমাদের আর্থিকভাবে সহায্য করে আসছে।

স্থানীয় মধু সংগ্রহকারী ইসমাইল হোসেন জানান, মৌমাছি সাধারণত গাছের উচু ডালে কিংবা বাড়ির বেলকনিতে বাসা করে। এরা অনেক শান্ত, তবে রেগে গেলে নিস্তার নেই। গ্রামের চাকের মধুতে হরেক রকমের ফুলের মধু থাকায় এটি বেশি কড়া। খেতেও অনে স্বাদ। এসব মৌমাছি হরেক রকম ফুলের মধু আহরণ করায় এ মধুর স্বাদও অনেক বেশী। মৌচাকে থাকা রাণী মাছির জায়গা পছন্দ হলে প্রতিবার একই স্থানে এরা বাসা করে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন বলেন, মৌচাষ খুবই লাভজনক। তবে যাদের বাড়িতে মৌমাছি বাসা করে তাদের একপ্রকার বিনা পরিশ্রমে বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দেয়। তাছাড়া ছাদের ঝুলন্ত অংশে মৌচাক দেখতেও ভালো লাগে। সাঈদের বাড়িতে যে মৌচাক আছে তা আমি নিজেও অনেকবার গিয়ে দেখেছি। খুবই চমৎকার লাগে দেখতে। যদি কেউ মৌ প্রশিক্ষণ নিয়ে এ চাষ শুরু করে আমি মনে করি সে সফল হবেন। কারন মধু সব রোগের মহাঔষধ তাই এর চাহিদা ও দাম রয়েছে যথেষ্ট। বেকার সমস্যা সমাধানে বহু বেকার মানুষকে মৌচাষ স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে দিয়েছে।