মেয়ের অ্যাসাইনমেন্টের খরচ দিতে পরনের কাপড় বিক্রি করলেন মা

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় স্কুলের অ্যাসাইনমেন্টের টাকা সংগ্রহ করতে নিজের পরনের তিনটি শাড়ি বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন মা।বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) উপজেলার আঠারবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়ে পড়লে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাকালে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বছর শেষে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই বা গ্রেড নির্ণয় করার লক্ষ্যে প্রত্যেক বিদ্যালয় থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছে।এ অবস্থায় উপজেলার এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিতু আক্তার গত বৃহস্পতিবার অ্যাসাইনমেন্ট আনতে গেলে টাকা চান শিক্ষকরা। মেয়ের অ্যাসাইনমেন্টের টাকার ব্যবস্থা করতে পরনের কাপর বিক্রি করেন মা।

রিতু আক্তার ওই এলাকা দিনমজুর মো. শহিদ মিয়ার মেয়ে। সে আঠারবাড়ি এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।রিতু আক্তার জানায়, অ্যাসাইনমেন্ট দিতে বললে শিক্ষক আনোয়ার হোসেন তিন পাতার প্রশ্ন, দুটি কলম ও এক পাতার সাজেশন দিয়ে ৩৪০ টাকা চান। এ সময় বাবার দেয়া ১০০ টাকার একটি নোট দিলে শিক্ষক আমাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন।

৩৪০ টাকাই দিতে হবে; দিতে না পারলে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না বলে জানান শিক্ষক আনোয়ার। পরে কান্নাকাটি করে বাড়িতে গিয়ে ঘটনাটি মা বিলকিস আক্তারকে জানায় রিতু।রিতুর মা বিলকিস বলেন, মেয়ে স্কুলে গিয়ে শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের কাছে অ্যাসাইনমেন্ট চাইলে ৩৪০ টাকা দিতে বলেন। তখন আমার মেয়ের কাছে ১০০ টাকা ছিল। কিন্তু স্যার অ্যাসাইনমেন্ট না দিয়ে ৩৪০ টাকা চান। দিতে না পারলে উপরের ক্লাসে উঠানো যাবে না বলে বের করে দেয়।

পরে মেয়ে বাড়িতে এসে অনেক কান্নাকাটি করে। তার কান্না সহ্য করতে না পেরে ঘরে থাকা তিনটি পুরোনো শাড়ি ৩০০ টাকায় বিক্রি করে টাকা দিয়েছি।এ বিষয়ে এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, অ্যাসাইনমেন্টে টাকা লাগে না। কেন ওই শিক্ষক টাকা নিয়েছেন এজন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, কেন ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্টের অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন সেজন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশের ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।