মাজার পূজারি সেজেও শেষ রক্ষা হলো না রউফের

গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে গিয়েও শেষ রক্ষা হলো না বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি আব্দুর রউফের (৪২) । ছদ্মবেশ ধারণ করে হয়ে যান মাজারপূজারি। থাকেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিলের তিশিখালি মাজারে। সেখানেও করতেন মাদকের কারবার। ২০২০ সালে আত্মগোপনের আগে তার হালকা গোঁফ ছিল। সাড়ে তিন বছর পর এখন তার বড় গোঁফের সঙ্গে লম্বা এবং জটা দাড়ি। মাথার চুলগুলোও প্রায় দেড় ফুট লম্বা। গলায় বেশ কয়েকটি তাসবিহর সঙ্গে আছে তাবিজ এবং হাতে বালার জটলা। নিজেকে গোপন রাখতে চেহারার পরিবর্তন এনেছেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার।

অবশেষে পুলিশ চলনবিলের তিশিখালি মাজার থেকে আব্দুর রউফকে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবাঘা সোনাপুকুর এলাকার মৃত আতাহার আলীর ছেলে।

শনিবার (২১ জানুয়ারি) নন্দীগ্রাম থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবুল কালাম আজাদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, একটি মাদক মামলায় আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রিসিভ করেন তিনি। গত সাড়ে তিন বছর অনেক সোর্স কাজে লাগিয়েও রউফের অবস্থান জানতে পারেননি। এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে আরেকটি মাদক মামলায় গত ৪ জানুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় আসে। বেশ কয়েকজন সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারেন রউফ বর্তমানে চলনবিলের তিশিখালি মাজারে অবস্থান করছে। গত বৃহস্পতিবার সিংড়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি রণবাঘায় প্রথম স্ত্রী রেখে আত্মগোপনের পর আসমা নামে এক পাগলিকে বিয়ে করে তিশিখালি মাজারেই থাকতেন।

নন্দীগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ২০১৬ সালের মে মাসে পৌর সদরের কলেজপাড়া এলাকায় পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে ১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ রউফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। একই বছরের নভেম্বর মাসে সদর ইউনিয়নের রনবাঘা সোনাপুকুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গাঁজাসহ এবং ২০১৮ সালের এপ্রিলে রণবাঘা বাজার মসজিদ এলাকার একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে গাঁজাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

আব্দুর রউফের প্রথম স্ত্রী আলেমা বেগম জানান, আত্মগোপনের পরিকল্পনা করে ২০২০ সালে গ্রামের দাদন কারবারির কাছে বাড়ি বন্দক রেখে ২০ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেন রউফ। আত্মগোপনের পর থেকেই সে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি। দাদন কারবারির চাপে অসহায় স্ত্রী একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি বন্দকের টাকা পরিশোধ করেন। এনজিওর ঋণের কিস্তির টাকার জন্য বাড়ি ছেড়ে জামাদারপুকুর পলগাছা এলাকার এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মরিচক্ষেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ নেন। ৯ মাস দিনমজুরির কাজ করে সেই টাকায় এনজিওর ঋণও পরিশোধ করেছেন। আলেমা বর্তমানে রণবাঘায় নিজ বাড়িতে থাকেন এবং অন্যের জমি নিড়ানিসহ দিনমজুরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।