ভালোবেসে বিয়ে, মেয়েপক্ষের বাধা, স্ত্রীকে স্বামীর হাতে তুলে দিলেন আদালত

ভালোবাসার বিয়ে। বিয়ের পরদিনই মেয়েকে স্বামীর কাছ থেকে নিয়ে যান মা ও মামারা। কিন্তু ১০ মাস পর সেই মেয়েই উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে জানালেন স্বামীর কাছে যেতে চান। এতদিন তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একবার নয়, দুইবার আদালতের ডায়াসের সামনে এসে অকপটেই এই জবানবন্দি দিয়েছেন সেই মেয়ে। পরিপ্রেক্ষিতে তা বিবেচনায় নিয়ে হেমা শর্মাকে স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, দুজনের মধ্যে যে বিয়েটা হয়েছে, সেটা তরুণী বা ছেলের পরিবারের কেউ অস্বীকার করছেন না। আর আদালতে হাজির হয়ে এই তরুণীও বলেছেন, তিনি স্বামীর কাছে যেতে চান। তার স্বামীও তাকে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক।

তরুণী এও বলেছেন, মামার বাড়িতে থাকাকালে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যে কারণে তার স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবনের স্বার্থে তাকে স্বামীর হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো। রোববার (১৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এরপরই সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা হেমাকে স্বামী শ্যাম সুন্দরের হাতে তুলে দেন।

স্বামীর কাছে ফিরতে পেরে মহাখুশি তরুণী। তিনি বলেন, আমার পরিবার খুবই ভালো। কিন্তু বিঞ্চু রায় নামে একটা লোকের কারণে আমার আজ এই অবস্থা। আমি আমার স্বামীকে পেয়েছি। আমি আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট।শ্যাম বলেন, বিয়ের পর আমার নামে অপহরণসহ নানা মামলা দেয়া হয়েছে। আমি চাই, আমার নামে করা মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হোক। আমি আমার স্ত্রীর মা ও মামাদের সম্মান করি। আশা করি, তারা আমার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো তুলে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ করে দেবেন।ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি ধর্মীয় নিয়ম মেনে শ্যাম ও হেমা উভয়ের সম্মতিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর রংপুরের নোটারি পাবলিকে এফিডেভিট সম্পন্ন করেন তারা।

বিয়ের বিষয়টি জানার পর হেমাকে পরদিন ভোররাতে জোর করে তুলে নিয়ে যায় তার পরিবার। পরে এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে আবেদন করেন শ্যাম। কিন্তু কমিশন কোনও পদক্ষেপ না নেয়ায় হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।ওই রিটে বলা হয়েছে, শ্যামের বয়স ২২ বছর, আর হেমার ১৯। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৩ এর বিধি ২২(১)(ক) অনুযায়ী, দুজনের বিয়ে নিবন্ধিত হয়। উভয়ের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জে। কিন্তু বিয়ের পরদিনই শ্যামের কাছ থেকে হেমাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরে স্ত্রীর ফোন পেয়ে স্বামী জানতে পারেন, হেমার বয়স ১৫ বছর দেখিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রে (আসক) রেখে গেছেন তার মামা গণেশ শর্মা। পরে সেখান থেকে ২৫ মে মামা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এরপর থেকে স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারছেন না স্বামী। রিটে বলা হয়, আইনানুযায়ী এখন স্বামী-স্ত্রী শ্যাম ও হেমা। কেউ তাদের এই পবিত্র সম্পর্ককে অস্বীকার করতে পারেন না। কিন্তু এই বিয়ে মেয়ের মা ও মামারা মেনে নিতে পারছেন না। ইতোমধ্যে ভাগ্নিকে বিদেশে পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। ভিসাও জোগাড় করে ফেলেছেন। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, রংপুর পুলিশ সুপার, বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর হাইকোর্ট হেমাকে আদালতে হাজির করতে তার মা সাবিত্রী রায়, মামা গণেশ শর্মা ও নারায়ণ শর্মাকে নির্দেশ দেন।

তারা যেন নির্বিঘ্নে আদালতে হাজির হতে পারেন, সেই বিষয়ে বদরগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা অনুযায়ী, এদিন সকালে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপরই হেমা, তার মা ও মামাদের বক্তব্য গ্রহণ করেন আদালত। পাশাপাশি শ্যামের বাবার বক্তব্যও নেয়া হয়। সেই বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা এই বিয়ে মেনে নিয়েছি। নানাভাবে আপোষ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মেয়ের পরিবার বলেছে, যা হবে তা আদালতেই। আদালতে শ্যামের পক্ষে এম তাজুল ইসলাম এবং মেয়ের মায়ের পক্ষে খুররম শাহ মুরাদ শুনানি করেন।