‘ভাইও যে আবরারের মতো খবরের শিরোনাম হবে তা কখনো ভাবিনি’

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম শিপনও বুয়েট ছাত্র আবরার হ’ত্যাকাণ্ডের মতো শিরোনাম হবেন তা কখনো ভাবেননি বলে জানিয়েছেন তার বোন ডা. সাথী আক্তার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভাইয়ের হ’ত্যার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার দুপুরে গাজীপুরে আনিসুল করিম শিপনের বাড়িতে তার বাবা, ভাই, বোন ও স্বজনদের সমবে’দনা জানাতে যান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) ও গাজীপুরের সাবেক এসপি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ সময় আনিসুল করিমের পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে তাদের ক’ষ্টের কথা তুলে ধরেন।

সাথী আক্তার বলেন, ‘টিভিতে, খবরের কাগজে আবরার হ’ত্যাকাণ্ডের ঘটনা শিরোনাম হতে দেখেছি। আজ আমার ভাইও যে আবরারের মতো খবরের শিরোনাম হবে তা কখনো ভাবিনি। কল্পনা করতেও পারিনি। আমার ভাইয়ের এমন কী অ’পরাধ ছিল যে তাকে নি’র্যাতন করে হ’ত্যা করতে হবে? আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’ডিসি হারুন অর রশীদ এ সময় বলেন, ‘প্রাথমিক ত’দন্তে জানা গেছে রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের মৃ’ত্যুটি স্বাভাবিক নয়, এটি প্রকৃতই একটি হ’ত্যাকাণ্ড। কারণ এই হাসপাতালটিতে স্বা’স্থ্য বিভাগ, মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ হাসপাতাল চা’লানোর মতো কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই, প্রশিক্ষিত জনবল নেই।’

ওই হাসপাতালের শুধু ওয়ার্ড বয় নয়, ওই হ’ত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জ’ড়িত রয়েছে তাদের বি’রুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় হ’ত্যা মা’মলা হয়েছে। হ’ত্যা মা’মলায় দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হবে। ত’দন্ত দ্রুত গতিতে চলছে।’ডিসি হারুন জানান, ওই হ’ত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক মো. নিয়াজসহ ১১ জনকে গ্রে’প্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে ১০ জনকে রি’মান্ডে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক অ’সুস্থ থাকায় এখন তার চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হলে তাকেও রি’মান্ড নেওয়া হবে। হারুন অর রশীদের সঙ্গে ঢাকা থেকে যাওয়া আনিসুল করিম শিপনের ২০ জনের মতো ব্যাচমেটও ছিলেন।

গত সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় মা’নসিক স’মস্যার কারণে রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে যান সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন। অ’সুস্থতা নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই মা’রা যান তিনি। পরে হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে তাকে মা’রধরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।জানা গেছে, দীর্ঘক্ষণ অ’চেতন থাকা অবস্থায়ও তাকে ভর্তি কার্যক্রম করা হয়নি। কিছুক্ষণ পর ১২টার দিকে তাকে হাসপাতালের লোকজন জাতীয় হৃদরো’গ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃ’ত্যু হয় শিপনের।

হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আনিসুল করিম শিপন হাসপাতালে ঢোকার পরই ছয় থেকে সাত জন তাকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফে’লে চে’পে ধরেন। এ সময় মাথার দিকে থাকা দুজন হাতের কনুই দিয়ে তাকে আ’ঘাত করছিলেন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি নীল কাপড়ের টুকরা দিয়ে শিপনের হাত পেছনে বাঁ’ধা হয়। চার মিনিট পর তাকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যান তিনি।আনিসুল করিম শিপন ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক স’ন্তানের জনক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রা’ণরসায়ন ও অনুপ্রা’ণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।