প্রসবব্যথা নিয়ে কেন্দ্রে, সন্তান কোলে নিয়ে বসছেন পরীক্ষায়

প্রসব বেদনায় কাতর এক পরীক্ষার্থী ইচ্ছাশক্তি আর প্রচণ্ড মনোবলের জোরে এ বছর শেরপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। প্রথম দিন পরীক্ষা শেষে তিনি একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সন্তান কোলে নিয়ে তিনি এখন সকল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। সাহসী এ মায়ের গল্প এখন ওই কেন্দ্রের সকল শিক্ষকের মুখে মুখে। অনেক পরীক্ষার্থী এসে দেখছেন নবজাতককে।কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের খুজুরিয়া গ্রামের ইউপি মেম্বার মফিজল হকের মেয়ে শিল্পী খাতুন। তিনি নিজাম উদ্দিন আহমেদ মডেল কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তার স্বামী শাহআলম একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।

আজ রোববার সরেজমিনে কলেজে গিয়ে জানা যায়, পরীক্ষার আগের দিন গত ৫ নভেম্বর রাতে প্রসব বেদনা নিয়ে শেরপুর ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন ওই পরীক্ষার্থী। রাত বেশি হওয়ায় নার্স তাকে জানান, পরদিন সকালে তার ডেলিভারি হবে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু রাত পোহালেই পরদিন ৬ নভেম্বর ওই পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। সবাইকে অবাক করে হাতে লাগানো স্যালাইন নিয়ে একটি ইজিবাইকে করে মা ফলিতন নেছাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রে চলে আসেন। পরে দুই ঘণ্টা পরীক্ষা দিয়ে হাসপাতালে ফিরে আসেন। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তিনি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। বর্তমানে মা ও ছেলে দু’জনেই সুস্থ আছেন।

এদিকে, প্রসব বেদনা নিয়ে হঠাৎ কেন্দ্রে আসা ওই পরীক্ষার্থীকে নিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া বলেন, ওই পরীক্ষার্থীর যাতে কোনো বিপদ না হয় সেজন্য কেন্দ্রে দ্রুত চিকিৎসক ডেকে আনা হয়। তার ডেলিভারির জন্য একটি কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়। কিন্তু পরীক্ষার্থী দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করে পরীক্ষা দেন।পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মেয়েটির সাহস দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। হাতে স্যালাইন, প্রচণ্ড প্রসব বেদনা। আমি তাঁকে বারবার বলেছি- মাগো ঝুঁকি নিও না। তার মুখে শুধু একটিই কথা- পাস নম্বর তুলেই চলে যাব স্যার। শেষ পর্যন্ত দুই ঘণ্টার একটু বেশি সময় পরীক্ষা দিয়ে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে হাসপাতালে ফিরে যায় এবং সন্তান জন্ম দেয়।

পরীক্ষার্থী শিল্পী খাতুন বলেন, আমার স্বপ্ন আমি শিক্ষক হব। একটি বছর নষ্ট হলে অনেক ক্ষতি হবে। তাছাড়া পরের বছর বাচ্চা লালন-পালন করে পরীক্ষা দেওয়া হবে কিনা তা অনিশ্চিত। তাই অনেক ভেবে আমি সিদ্ধান্ত নেই যে, কষ্ট হলেও পরীক্ষা দেব। তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা খুব একটা ভালো হয়নি। তবে আমার মনোবল দেখে শিক্ষকরা অনেক সাহস দিয়েছেন। তারা যখন ডাক্তার ডেকে এনেছেন তখন আমি ভরসা পেয়েছি। তিনি বাচ্চা নিয়েই সকল পরীক্ষা দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুর রশিদ বলেন, মেয়েটি অসম্ভব সাহসী। বাচ্চা হওয়ার পরেও প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আমরা তার জন্য আলাদা একটি কক্ষের ব্যবস্থা করেছি। সেখানে তার মা বাচ্চাটিকে নিয়ে অবস্থান করেন। পরীক্ষা চলাকালে মাঝে মাঝে কিছুক্ষণের জন্য পরীক্ষার্থী এসে বাচ্চাকে খাইয়ে যায়।