পাওনা টাকার জন্য দেনাদারের বাড়ির সামনে মরদেহ নিয়ে ধরনা

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর মৎস্য বন্দরে সুনীল দাস (৫৭) নামের এক লন্ড্রি ব্যবসায়ী মারা যাওয়ার পর তাঁর মরদেহ মো. ইউসুফ মুসল্লি নামের স্থানীয় একজনের বাড়ির দরজায় রেখে ধরনায় বসেছেন স্বজনেরা। তাঁদের দাবি, সুনীল দাস ইউসুফ মুসল্লির কাছ থেকে ১২ লাখ টাকায় তিন শতক জমি কেনেন। কিন্তু ইউসুফ মুসল্লি দীর্ঘ এক যুগেও ওই জমি বুঝিয়ে দেননি। সুনীল দাস জমি না পেয়ে তাঁর ১২ লাখ টাকা ফেরত চান। কিন্তু ইউসুফ মুসল্লি টাকা নিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতেই তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।সুনীল দাস গতকাল শুক্রবার রাতে মারা যান।

আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে তাঁর মরদেহ ইউসুফ মুসল্লির বাড়ির সামনে রাখা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ইউসুফ মুসল্লির বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে সুনীল দাসের আত্মীয়স্বজন আহাজারি করে পাওনা টাকার কথা বলছেন। আশপাশের শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করেছেন। দুপুর পর্যন্ত মৃত সুনীল দাসের মরদেহ ইউসুফ মুসল্লির বাড়ির সামনেই পড়ে ছিল।

এ সময় মৃত সুনীল দাসের স্ত্রী মাধুরী দাস বলেন, ‘আমার স্বামী একজন লন্ড্রি ব্যবসায়ী। ইউসুফ মুসল্লি দীর্ঘ এক যুগেও আমাদের জমি বুঝিয়ে দেননি, টাকাও ফেরত দেননি। এ চিন্তায় চিন্তাতেই মানুষটা শ্যাষ হয়ে গেল।’সুনীল দাসের ছোট ভাই পঙ্কজ দাস বলেন, চিকিৎসার জন্য অল্প কিছু টাকাও তাঁরা চেয়েছিলেন, তা-ও পাননি। যে কারণে টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেননি তাঁরা।

ইউসুফ মুসল্লির কাছে পাওনা টাকার জন্য বহু দেনদরবার করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা সালিস-মীমাংসাও করেছেন। কিন্তু ইউসুফ মুসল্লি টাকা ফেরত দেননি। এই টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে সুনীল দাস অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় গতকাল রাতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। টাকার শোকেই সুনীল দাস মারা গেছেন বলে দাবি করেন পঙ্কজসহ নিকটাত্মীয়রা।

খবর পেয়ে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘ইউসুফ মুসল্লি এবং তাঁর পরিবারের লোকজনকে ঘরে পাওয়া যায়নি। তাঁরা ঘর ছেড়ে চলে গেছে বলে শুনেছি। সুনীল দাসের পরিবারকে মরদেহের সৎকার করার জন্য বলা হয়েছে। আর পাওনা টাকাও আদায় করে দেওয়া হবে বলে সুনীলের পরিবারকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।’মুঠোফোনে জানতে চাইলে ইউসুফ মুসল্লি বলেন, ‘এর আগে সুনীল দাসকে ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছি। বাকি টাকাও ফেরত দেব। আর আমি পালিয়ে যাইনি। এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছি।’