নতুন সংসারে ব্যস্ত বাবা-মা, যৌন নিগ্রহের শিকার কিশোরী

রাজশাহী: চট্টগ্রামে নতুন সংসার পেতেছেন বাবা, মায়ের নতুন সংসার ফরিদপুরে। ব্যস্ত বাবা-মা আশ্রয় দিতে রাজি নয়।নানা-নানিও আর আশ্রয় দিতে চায় না তাকে। যৌন নিগ্রহের শিকার হয়ে কিশোরী মেয়েটি (১৩) এখন কাতরাচ্ছে হাসপাতালে। সম্প্রতি রাজশাহী শহরে ঘটেছে এমনই ঘটনা। নিরুপায় হয়ে আশ্রয় চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে।জানা গেছে, রাজশাহী নগরের একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো কিশোরীটি। গৃহকর্তার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গৃহকর্তা তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু সে আর সেখানে ফিরতে চায় না। নিরুপায় হয়ে তখন সে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে আশ্রয় চেয়ে চিঠি

পাঠায়।১৩ বছরের মেয়েটি এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। তার মেডিকেল প্রতিবেদনে লেখা রয়েছে ‘রিপিটেড সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট। ’জানা গেছে, গত ৯ জানুয়ারি কিশোরীর পাঠানো চিঠি পান জেলা প্রশাসক। এরপর তিনি সেটা রাজশাহী সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে পাঠান। চিঠির ওপরে লিখে দেন, ‘জরুরি আলোচনা প্রয়োজন। ’চিঠি পেয়েই রাজশাহী সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ
করেন। এরপর তিনি মেয়েটিকে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ড থেকে ওসিসিতে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি নওগাঁয়। বাবা-

মায়ের বিচ্ছেদের পর অনেকদিন নানির বাড়িতেই থেকেছে এই কিশোরী। গত বছরের ১২ আগস্ট রাজশাহী নগরের এক বাড়িতে তাকে গৃহকর্মীর কাজে রেখে যান তার নানি। এই গৃহকর্তার বিরুদ্ধেই যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে ওই কিশোরী। জানা যায়, অভিযুক্ত গৃহকর্তার নাম গোলাম কবির (৮০)। তিনি একটি সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।ভুক্তভোগী কিশোরী তার চিঠিতে লিখেছে, তার বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরে। ১০ বছর আগে তার বাবা-মা উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। তখন সে ছোট ছিল। তারা উভয়েই এখন নতুন করে সংসার শুরু করেছেন। মার নতুন সংসার ফরিদপুর আর বাবার নতুন সংসার চট্টগ্রামে। তারা কেউ আমাকে (কিশোরী) আশ্রয় দিতে রাজি নয়। দীর্ঘ কয়েক

বছর ধরে নানির বাসায় থাকছিলাম। কিন্তু ৫ মাস পূর্বে আমার নানি গোলাম কবির নামে একজনের বাসায় কাজের জন্য আমাকে রেখে যায়। সেখানে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। আমাকে প্রায় সময় ইজ্জতহানীর চেষ্টা ও গায়ে হাত দেয়া হয়। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭ নম্বর বেডে ভর্তি আছি। আমাকে আবার তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরপূর্বক চেষ্টা করছে। আমি গোলাম কবিরের বাড়িতে যেতে চাই না। যদি জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে আমার জীবননাশের হুমকি আছে। এমতাবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল হতে নিরাপদস্থানে আশ্রয় দেওয়ার জন্য আপনার কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানাচ্ছি।এ বিষয়ে রাজশাহী

সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজ বাংলানিউজকে বলেন, ওই কিশোরী যে বাসায় থেকে গৃহকর্মীর কাজ করত, সে বাসায় একজন নার্স ভাড়া থাকতেন। তিনিই নির্যাতনের শিকার এই কিশোরীকে উদ্ধার করে গত ৫ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দেন। এরপর গৃহকর্তা তাকে বাসায় আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই ওই কিশোরী তার সঙ্গে যায়নি। আমরা খবর পেয়ে রামেক হাসপাতালে ছুটে যাই। দেরি হলে হয়তো মেয়েটাকে তারা নিয়ে চলে যেতো। আমরা আসায় তারা মেয়েটিকে নিয়ে যেতে পারেনি। তাকে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে ওসিসিতে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, সে (কিশোরী) মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের যুববিষয়ক ক্লাবের এক সদস্যের মাধ্যমে

জেলা প্রশাসকের কাছে আশ্রয় চেয়ে চিঠি দেয়। সে জানিয়েছে, গোলাম কবির নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে থাকতো। গোলাম কবির নগরীর একটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলে শুনেছি। সে আর গোলাম কবিরের বাড়িতে যেতে চায় না। মেয়েটি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। হাসিনা মমতাজ বলেম, রামেকে চিকিৎসা শেষে মেয়েটিকে আমাদের হেফাজতে নেবো। এরপর প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।