ত্রিশালে দুই ভাইয়ের রাজত্ব!

এক রাজ্যে দুই রাজা। গোটা রাজত্বেই চলছে তাদের খবরদারি। কুশাসন আর নি’র্যাতন। ভ’য়ে-আ’তঙ্কে নীরব সবাই। এ দুই রাজা হলেন- আপন দুই ভাই। এখন রাজ্য শাসন করলেও এক সময় তারা জমির দালালি আর বালির ব্যবসা করতেন ।আর এখন তাদের আলিশান জীবন। চলেন দামি গাড়িতে। তাদের কথার বাইরে যাওয়ার সাহস নেই কারও। বলতে গেলে পুরো ত্রিশাল তাদের নিয়ন্ত্রণে। নানা অ’পকর্ম, মা’দক ব্যবসা, জো’র জবরদস্তি করে নিজেদের কব্জায় নিয়েছেন সাধারণ মানুষের জমি ।তাদের ইশারা ছাড়া ত্রিশালে কিছুই নড়ে না। সাধারণ জীবন থেকে রাজনীতির ছোঁয়ায় ক্ষমতাধর হয়ে উঠা এই দুই ভাই হলেন ত্রিশাল ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান মাহমুদ ও শিল্ল হিসাবে খ্যাত পিন্স । অর্থ আর সম্পদের লোভে এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে জড়ান এ দুই ভাই। পরে ক্ষমতা বদলের পর তারাও রূপ বদলান। রাজনীতিকে ব্যবহার করে ত্রাস হয়ে ওঠেন ত্রিশালে ।তাদের দাপটে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এখন কোনঠাসা। কেউ কেউ অ’পমানে, অভিমানে রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন। আর যারা আছেন তারা তিন ভাগে বিভক্ত। এই দুই ভাইয়ের বি’রুদ্ধে উঠা অ’ভিযোগ অনেক। এসব অ’ভিযোগ জমা হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর,স্ব’রা’ষ্ট্রমন্ত্রী, মাননীয় স্পিকার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি, দু’র্নীতি দ’মন কমিশনের চেয়ারম্যান,পুলিশের আইজিপি বরাবরে।

অ’ভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে স্ব’রা’ষ্ট্র ম’ন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সং’সদীয় স্থায়ী কমিটিতে। এছাড়া একাধিক গো’য়েন্দা সংস্থাও তাদের বি’ষয়ে অনুসন্ধান করছে।হাসান মাহমুদ ও পিন্সের বাবা ময়মনসিংহ – ৭ ত্রিশাল আসনের এমপি হাফেজ রুহুল আমিন মাদানি। অভাবের সংসারের কারণে পড়ালেখা বেশিদূর করতে পারেননি তারা। তারা দুই ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণে ত্রিশালের পরিবহন সেক্টর ও বালি মহালের চাঁ’দা।ক্ষমতার পালা বদলে তারা ভিড়েন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। সান্নিধ্যে আসেন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সাথে । এরপরই ভাগ্য খুলে যায় দুই ভাইয়ের। জড়িয়ে পড়েন জমি দ’খল, টে’ন্ডারবাজি, ইয়াবা ব্যবসায় । এখন তারা হাজার কোটি টাকার মালিক। তাদের টাকা এখন স্বজনদের ব্যাংক একাউন্টে ।

ত্রিশালে টে’ন্ডারবাজির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন দুই ভাই। এলজিইডির সব টেন্ডারে নির্ধারিত ভাগ দিতে হয় তাদের। ওদিকে টে’ন্ডারবাজির পাশাপাশি মা’দক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করেন আলাদা সিন্ডিকেট।তাদের মা’দক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেন বীর রামপুরের মান্নান ইয়াবা চালানসহ ধরা পরে বর্তমানে কুমিল্লা কা’রাগারে আর মঠবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল ঢাকা কেন্দ্রীয় কা’রাগারে তাকে ২০১৯ সনে ইয়াবার চালানসহ ডি’বি পুলিশ আ’টক করে, পরে পুলিশের ব্যাপক জি’জ্ঞাসাবাদে হাসান মাহমুদের নামও বলে। এদিকে তাদের সাথে অ’স্ত্র ও মা’দক সবসময়ও থাকে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগের একজন সদস্য।

ত্রিশাল উপজে’লা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান মাহমুদ সম্পদের যতটুকু খোঁজ পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে-
দরিরামপুর এলাকায় ৬ তলা বাড়িসহ ১০ শতাংশ জমি, বগার বাজার এলাকায় ১৫ একর জমি, নিজ এলাকায় ১০ একর জমি, সিএনজি পাম্পসহ ২ একর জমি, ময়মনসিংহে স্বজনদের নামে ২ একর জমি। এদিকে সৌদি আরবে বোন ও তার জামাইয়ের নামে ৪৫৬ কোটি পা’চারের অ’ভিযোগ এখন সবার মুখে মুখে ।অ’ভিযোগ উঠেছে, পুলিশ দিয়ে ক্র’সফা’য়ার ও মা’মলার ভ’য় দেখিয়ে সিএনজি পাম্মের অফিসে নিয়ে এক নিরহ ব্যাক্তির ১ একর ৪ শতাংশ জমি লিখে দিতে বা’ধ্য করেন হাসান ।

এছাড়া পিন্সের নামে ময়মনসিংহ শহরে ৪৫ শতাংশ, চরপাড়া মোড়ে ৫.৫ শতাংশ, ৩ একর বাইপাসে। আলীয়া মাদ্রাসা এলাকায় ৩ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। নিজের গাড়ীর মুল্য কোটি টাকা? প্রতিজনের গাড়ী আলাদা। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ত্রীকে চাকরি দিয়ে নিয়োগ বানিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন।স্থানীয়রা জানান, দুই ভাইয়ের নে’শা জমি করার। যেখানে যেভাবে পারেন অন্যের জমি নিজেদের কব্জায় নেন।অ’ভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা,ময়মনসিংহ রয়েছে তাদের জমি, ফ্ল্যাট বাড়ি। মাছের ঘের, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও মহাখালী ডিওএইচএস, সেগুনবাগিচায় রয়েছে একাধিক অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট,

একাধিক পেট্রোল পাম্প, ইটভাটা, ময়মনসিংহ- ঢাকা হাইওয়ে রোডে ব্যক্তিগত ২টি অফিস, ময়মনসিংহ বাইপাসে অসংখ্য দোকান। ত্রিশালে রয়েছে ৪৪টি দোকান। যার সর্বনিম্ন মূল্য ১১ কোটি টাকা। সৌদি আরব, দুবাই ও মালয়েশিয়ার তাদের সম্পত্তি রয়েছে বলেও অ’ভিযোগ এসেছে।
হাসান মাহমুদের সাথে কথা বল্লে তিনি বলেন, এখন আর ত্রিশাল থাকার পরিবেশ নেই। তাই আমি আর এখন ত্রিশালে যাইনা। আমি ঢাকায় মন্ত্রীর সাথে থাকি। এই বি’ষয়ে আর কথা বলতে চাই না। আমি মন্ত্রীর সাথেআছি বলে ফোন কে’টে দেন।এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমপি মাদানি ও দুই ভাইয়ের অ’বৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুদক।

দুদক ইতিমধ্যে তাদের সম্পদ অর্জনের বি’ষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি প্রস্তুত করেছেন । ময়মনসিংহের দুদক অফিসের এক কর্মকর্তা দুদকের অ’ভিযোগ র’হস্যজনক কারণে আড়াল করে রাখেন।ওই কর্মকর্তা তাদের আত্বীয়দের বাসায় আমন্ত্রিত হয়ে যান। এদিকে জানা গেছে, দুদক ঢাকা থেকে অ’ভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে।দুদকের সেই অ’ভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়, গত দুই বছরে পিতা এমপি থাকায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কমপক্ষে কয়েক একর খাস জমি দ’খলে নেয়ার অ’ভিযোগ আছে তাদের বি’রুদ্ধে।

অ’ভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় নিজেদের ও তাদের পরিবার এবং আত্বীয় স্বজনদের নামে কোটি কোটি টাকা জমা রেখেছেন হাসান মাহমুদ ও তার ভাই পিন্স ।এছাড়া দেশীয় কয়েকটি ব্যাংকে আড়াইশ কোটি টাকা জমা থাকার অ’ভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সৌদি আরবে তাদের সেকেন্ড হোম আছে বলে অ’ভিযোগ রয়েছে।

ময়মনসিংহ জে’লা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযো’দ্ধা আব্দুল মতিন স’রকার বলেন, দলে অনুপ্রবেশকারীদের জন্য এখন আমরা আর আওয়ামী লীগ করতে পারছি না। দলের দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ করেছি, এখন অবসরে আছি। আওয়ামী লীগের আবার দুঃসময় হলে আমি এবং জে’লার যারা দলের জন্য নিবেদিত তারা আবার সক্রিয় হয়ে কাজ করবো।তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তার জন্য তাকে সাধুবাদ জানাই। টে’ন্ডারবাজি ও নানা অ’পকর্ম করে হাজার হাজার কোটি টাকা লু’টপাট যারা করেছে এদের আইনের মাধ্যমে ক’ঠোর বিচার হওয়া দরকার।