টিউশনি করে জমানো টাকায় ফার্ম করে কোটিপতি

হতাশাকে উপেক্ষা করে চাকরির বিকল্প হিসেবে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের গবাদি পশু পালনে প্রশিক্ষণ নেন আতিকুর রহমান। আর এটিই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মাত্র সাড়ে চার বছরের মেধা আর পরিশ্রমের ফসল হিসাবে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ আত্মকর্মীর স্বীকৃতি লাভ করেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা তিনি।

ছোটবেলা থেকে জয়পুরহাট জেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের বাদাউস গ্রামের কৃষক আতাউর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান ছিল একজন স্বপ্নবাজ সন্তান। ইচ্ছে ছিল ছিল উচ্চ শিক্ষিত হয়ে সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার হয়ে দেশের সেবা করার। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০১৪ সালে বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন আতিকুর।

এরপর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিলেও চাকরি না হওয়ায় সমাজ ও পরিবারে নিজেকে অযোগ্য মনে হতে থাকে তার।আতিকুর বলেন, “অসহায়ত্বের মাঝে একদিন আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মার সেই ডায়লগ মনে পড়ে যায়। ‘যদি একটি বানরের সামনে একটি কলা ও একশ ডলার ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে বানর কলাটিকেই নেবে।

কারণ বানর জানে না একশ ডলার দিয়ে আরো অনেকগুলো কলা কিনা যায়।” তিনি আরও জানান, এরপর মনের মাঝে উদয় হলো আমি ব্যবসা করব। চাকরি না করে মানুষকে চাকরি দেব। কিন্তু ব্যবসা করতে টাকা লাগবে। অভিজ্ঞতা লাগবে। এরমাঝে একদিন যুব উন্নয়ন অফিসের কথা জানতে পারি। সেখানে গিয়ে উপপরিচালক তোছাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে আমার কথা হয়।

এলাকার শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, বেকার যুবকদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বল্প সার্ভিস চার্জে ঋণ সহযোগিতায় বেকার যুবদের আত্মনির্ভরশীল ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির খবর জানতে পারেন আতিকুর। জানা গেছে, ২০১৫ সালে ৭ দিন মেয়াদি গবাদি পশু পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।এরপর পরিবারের নিকট থেকে সামান্য কিছু আর টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে চারটি গরু নিয়ে পথচলা শুরু করেন আতিকুর। এসময় যুব উন্নয়ন থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এরপর ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়া ও করিমপুর এলাকায় ভাড়া নেওয়া সেডে টার্কি, তিতির, কেদারনাথ ও কোয়েল পাখি চাষ করেন আতিকুর। পরবর্তীতে ব্যাংক হতে কিছু ঋণ ও লাভের টাকা দিয়ে সোনালি, ব্রয়লার ও মাছ চাষ শুরু করেন।

এরপর তাহেরা মজিদ মাল্টিপারপাস এগ্রো ইন্ডা. লি. নামে একটি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। এর অধীন রয়েছে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান। মণ্ডল হ্যাচারি এন্ড চিকস, মেসার্স আদি ট্রেডার্স ও মেসার্স মণ্ডল ট্রেডার্স। এছাড়া সায়ান ফার্মেসি নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যার সত্ত্বাধিকারী তার স্ত্রী শিউলী খাতুন।

সব মিলে বর্তমানে ৪৫ জন স্থায়ী এবং ৩৫ জন অস্থায়ী কর্মচারী রয়েছে তার। অনেক বেকার যুবক এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তাদের বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন বলেন জানান আতিকুর রহমান। জয়পুরহাট যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালক তোছাদ্দেক হোসেন বলেন, প্রায় ৫ শতাধিক খামারি সৃষ্টি করে তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মাছ ও মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ করাসহ তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলার পেছনে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন আতিকুর রহমান।

বর্তমানে আতিকুর রহমানের ফার্মে প্রায় এক লাখ সোনালি মাংসের মুরগি, ১০ হাজার সোনালি ডিমের মুরগি, ৫০ হাজার ব্রয়লার মুরগি, ৬টি পুকুর যাতে প্রায় এক হাজার মণ ওজনের রুই, কাতলা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া মাছ রয়েছে। বর্তমানে আতিকুরের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা হলেও পুঁজিসহ নিজস্ব সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় তিন কোটি টাকা।সব খরচ বাদে মাসিক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় থাকছে বলে জানান আতিকুর। ইতোমধ্যে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসাবে জাতীয় যুব দিবস-২০১৮ জেলা পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ সফল আত্মকর্মী ও উদ্যোক্তা’ হিসেবে ক্রেস্ট ও সম্মাননা লাভ করেছেন আতিকুর। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।