চিকিৎসক বললেন অসম্ভব, নরমাল ডেলিভা’রিতে একসঙ্গে তিন শি’শুর জন্ম

দিনাজপুরে একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন পারভীন বেগম (৩০) নামের এক নারী। নরমাল ডেলিভা’রির মাধ্যমে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই নারী।দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের গাইনি ওয়ার্ডে তিন সন্তানের নরমাল ডেলিভা’রি করানো সম্ভব না হলেও বীরগঞ্জ উপজে’লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক এটি সম্ভব করেছেন। পারভীন বেগম বীরগঞ্জ উপজে’লার ৫ নম্বর সুজালপুর ইউনিয়নের বর্ষা চেঙ্গাইক্ষেত্র গ্রামের কৃষক মো. শফিকুল ইস’লামের স্ত্রী’।বুধবার (০৪ নভেম্বর) বীরগঞ্জ উপজে’লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন সন্তানের জন্ম দেন ওই নারী। নরমাল ডেলিভা’রির মাধ্যমে দুই ছে’লে ও এক মে’য়েসন্তানের জন্ম দেন এই মা। একসঙ্গে তিন সন্তান জন্ম দেয়ায় উপজে’লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতির আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশী ও উৎসুক জনতা শি’শুদের দেখতে ভিড় করেন।

উপজে’লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মক’র্তা চিকিৎসক আফরোজ সুলতানা লুনা বলেন, তিন সন্তানের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। তাদের মা সুস্থ আছেন। সিজার ছাড়াই তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই প্রসূতি।চিকিৎসক আফরোজ সুলতানা আরও বলেন, ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম

মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ওই নারী। সেখানকার চিকিৎসক বলেছেন, আমাদের এখানে একসঙ্গে তিন সন্তানের নরমাল ডেলিভা’রি সম্ভব নয়। আপনারা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লে যান।বুধবার সকালে প্রসবব্যথা শুরু হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লে না গিয়ে বীরগঞ্জ উপজে’লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন ওই নারী। চিকিৎসক আফরোজ সুলতানা লুনা সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রসূতির পাশে থেকে একে একে তিন সন্তানের নরমাল ডেলিভা’রি সম্পন্ন করেন।

পারভীন বেগমের স্বামী শফিকুল ইস’লাম জানান, তার স্ত্রী’ অ’সুস্থবোধ করলে ৩১ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের গাইনি ওয়ার্ডের ১ নম্বর ইউনিটের ৪ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়।সেখানে পরীক্ষা শেষে জানতে পারেন পারভীনের পেটে তিন শি’শুসন্তান রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জটিল উল্লেখ করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লে নিয়ে যেতে বলেন।কিন্তু আর্থিক সমস্যা থাকায় স্ত্রী’কে রংপুর মেডিকেলে নেয়া সম্ভব হয়নি তার। কাজেই এখানে রেখে স্ত্রী’র চিকিৎসা করাতে চান শফিকুল। কিন্তু কিছুতেই রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ অবস্থায় সন্তান প্রসবের আরও দুই মাস সময় আছে উল্লেখ করে ওই নারীকে মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর) ছাত্রপত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিরূপায় হয়ে পারভীনকে নিয়ে বাড়ি চলে যান স্বামী।বুধবার পারভীনের প্রসব ব্যথা শুরু হলে সকাল ১০টার দিকে বীরগঞ্জ উপজে’লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকের প্রচেষ্টায় নরমাল ডেলিভা’রির মাধ্যমে দুটি ছে’লে এবং এক মে’য়ে সন্তানের জন্ম দেন পারভীন।স্থানীয় শিক্ষক কৃষ্ণ কুমা’র রায় জানান, ওই প্রসূতি আমা’র প্রতিবেশী। পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাদের এখানে রেখে চিকিৎসা দেয়ার অনুরোধ জানাই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অনুরোধ উপেক্ষা করে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ায় পরিবারটি বিপদে পড়ে।

বীরগঞ্জ উপজে’লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মক’র্তা আফরোজ সুলতানা লুনা বলেন, সকালে প্রসূতিকে আশ’ঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতা’লে নিয়ে আসা হয়। তার পরিস্থিতি দেখে আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কারণ তাকে উন্নত চিকিৎসা’সেবা দেয়ার কিংবা বাইরে নেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। অনেকটা আল্লাহর ওপর ভরসা করে ছেড়ে দিয়েছি। অ’পারেশন ছাড়াই তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই প্রসূতি। মা এবং তিন শি’শু ভালো আছেনএ বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের পরিচালক নির্মল চন্দ্র দাস বলেন, বিষয়টি আমা’র জানা ছিল না। এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।