এসএসসিতে এ প্লাস পাওয়া যমজ দুই মেয়ের জন্য ভিক্ষা ছেড়েছেন নজরুল

জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলাম। জীবনের পথ চলতে শুরুর দিকে তাকে জীবিকা নির্বাহে করতে হতো ভিক্ষা। তবে তিনি এখন ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কারন তার সন্তানরা বড় হয়েছে। নজরুলের বড় দুই যমজ মেয়ে হিরামনি ও মুক্তামনি এখন স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পড়ছে। মূলত তাদের সন্মানের কথা ভেবেই নজরুল ছেড়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি। গান গেয়ে শ্রতাদের কাছ থেকে যে টাকা পান তা দিয়ে বহু কষ্টে চলছে সংসার ও দুই মেয়ের পড়ালেখার খরচ। তবে শত অভাবেও সন্তানদের পড়াতে চান তিনি।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদরের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা। সংসার জীবনে দুটি জমজ মেয়ে ও একটি ১২ বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে তার। তবে অর্থ কষ্টের মধ্যেও চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছেন মুক্তামনি ও হিরামনি।

জমজ দুই বোন বলেন, প্রতিদিন বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে বাবুলিয়া বাজার যেতে হয় তাদের। সেখান থেকে ইজিবাইকে কলেজে যেতে আসতে তাদের দু’বোনের ৬০ টাকা লাগে। টিফিনের টাকা তো অনেক দূরের কথা যেদিন পথ খরচের টাকা থাকে না সেদিন তাদের আর কলেজে যাওয়া হয় না। এমনকি তারা বই কেনার খরচ বাচাতে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা না পেলে হয়তো আমাদের পড়াশোনা অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নজরুল জানান, জন্ম থেকে আমার দৃষ্টিশক্তি নেই সুরটুকু দিয়েছেন তা দিয়ে খালি গলায় গান গেয়ে হাঁটে বাজারে গান শুনিয়ে মানুষের কাছ থেকে পাওয়া টাকা নিয়ে সংসার যাত্রা নির্বাহ করি। এভাবে পরিশ্রম করে অর্জিত পয়সা দিয়ে যমজ মেয়ে মুক্তমনি ও হিরামনিকে গত বছর এসএসসি পাস করিয়েছেন। ছোট ছেলে আরাফাতকে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াচ্ছেন। হীরামনি এ প্লাস ও মুক্তামনি এ প্লাস পেয়ে বর্তমানে বাণিজ্য বিভাগে শহীদ স্মৃতি কলেজে পড়াশুনা করছে। তার স্ত্রী শরিফা খাতুন সংসারের হাল ধরে তার মতো একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জীবনকে ধন্য করেছেন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নজরুলের স্ত্রী শরিফা খাতুন জানান, মেয়ে দুটো মেধাবী তবে তাদের যথাযথ পড়াশুনার খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছে আমাদের। আমার স্বামী অন্ধ মানুষ। বিভিন্ন বাজারে আমার স্বামী গান-বাজনা করে মানুষকে খুশি করে যে টাকা পান সেটা দিয়ে সংসার কোনরকমে চলে। সরকারের পক্ষ থেকে বা কারো সহযোগিতা পেলে মেয়ে দুটো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে তাছাড়া সম্ভব নয়।

বাবুলিয়া জয়মনি-শ্রীনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রসাদ কুমার বিশ্বাস বলেন, হীরামণি ও মুক্তামণি খুভ ভালো স্বভাবের মেয়ে। তারা পড়াশুনায় যথেষ্ট ভালো করছে। বাবা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জেনে সেশন চার্জ, পুনঃভর্তি ফি ও পরীক্ষার ফি যথাসম্ভব কম নিয়ে তাদেরকে পড়াশুনা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে কলেজে তারা ভর্তি হয়েছে সেখানও তারা একই ধরণের সুবিধা পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।সাতক্ষীরা সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু জানান, যেহেতু জন্ম থেকে নজরুল ইসলাম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিষয়টা অত্যন্ত মানবিক। তার দুটি মেয়েকে নিয়ে আমার কাছে আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সরকারি সহায়তা করা হবে।