এবার ‘মেডিকেলে’ চান্স পেয়েছেন ‘যমজ বোনসহ’ এক স্কুলের ‘২৩ ছাত্রী’

মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাই যে একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতে স্বপ্ন পূরণের মূলভিত্তি- তা প্রমাণ করল কিশোরগঞ্জের এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন কলেজ থেকে এইচএচসি পাসের পর এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের ২৩ শিক্ষার্থী।

আর এ সাফল্যের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছেন প্রাণের বিদ্যাপীঠ কিশোরগঞ্জ এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও এসেছেন এ মিলনমেলায়।এমন সাফল্য-গৌরবগাথার ধারাবাহিকতা রক্ষার অঙ্গীকারে দৃঢ়প্রত্যয়ী ও গর্বিত এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর।

কিশোরগঞ্জ শহরের নারীশিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত এসভি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। শহরের বিশিষ্ট আইনজীবী ভৈরব চন্দ্র চৌধুরীর কন্যা বিদুষী নারী সরযু বালা ১৯৪৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। জন্মের পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি। অসামান্য সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ১৯৬৮ সালের ১৫ নভেম্বর বিদ্যালয়টি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত হয়।

কিন্তু কোনোদিন ধারাবাহিক গৌরব ও সাফল্যগাথার ছন্দপতন না ঘটায় এসভি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়টি হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের সারথি হিসেবে।এ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করে বিভিন্ন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা দুই যমজ বোনসহ ২৩ জন শিক্ষার্থী এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এতে এখন শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষকদের মুখে আনন্দের ঝিলিক।

এই ২৩ শিক্ষার্থী ঢাকার শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, বগুড়া মেডিকেল কলেজ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা ২৩ শিক্ষার্থীর একসঙ্গে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার এ সাফল্য এখন মিডিয়া-সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠেছে।জানা গেছে, ২০১৮ সালে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২৩৩ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৯৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়। পাসের হার শতভাগ এবং এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এদের ২৩ জন পাবলিক মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পান।

এদের মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া অমৃতি অরাত্রিকা ও বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া দুই যমজ বোনের সঙ্গে কথা হলে তারা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তাদের অভিভাবকদের প্রতি এমন অসাধারণ সাফল্যের কৃতিত্ব উৎসর্গ করেন। এ সময় তারা জানান, শিক্ষকগণই তাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং সেই স্বপ্ন পূরণে তাদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ কবীর যুগান্তরকে জানান, প্রকৃত অর্থে একজন স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীর মূল ভিত্তি রচনার প্রধান স্তর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আর এজন্য এ বিদ্যালয়টি জন্মের পর থেকে ওই চেতনাকে ধারণ করেই শিক্ষার্থীদের উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে শিক্ষা প্রদান করে থাকে। এমন চেতনা ও অঙ্গীকারই এ প্রতিষ্ঠানের ঈর্ষণীয় সাফল্য ও গৌরবগাথার চাবিকাঠি।