ইমার্জেন্সি ও আউটডোরের সমন্বয়হীনতায় বিনা চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু

হাসপাতালের বহির্বিভাগে দীর্ঘ লাইনে চিকিৎসার সিরিয়াল পেল না শিশু হাসান (৯ মাস)। আবার ইমার্জেন্সি বিভাগেও চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা হলো না।শেষ পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালেই মারা যায় শিশুটি। রোববার (৮ নভেম্বর) পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত হাসান উপজেলার পাথরঘাটা পূর্বপাড়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। শিশুটির অভিভাবকরা বলছেন, চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুটি মারা গেছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।শিশুটির পরিবারের সদস্যরা জানান, গতকাল শনিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শিশু হাসানের প্রসাব বন্ধ হয়ে যায়। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অভিভাবকরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে ওই সময় নির্ধারিত চিকিৎসক সওগাত এহসান সাম্য ছিলেন না। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মাসুদ রানা ওই শিশুটিকে বহির্বিভাগে দেখানোর জন্য পাঠান।

বহির্বিভাগে দীর্ঘ লাইন থাকায় শিশুটিকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এদিকে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় নষ্ট হওয়ায় শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।অসহায় অভিভাবকরা শিশুটিকে নিয়ে আবার ইমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে যান। তখনও ইমার্জেন্সিতে ডাক্তার সওগাত এহসান সাম্যকে তারা পাননি। নিরুপায় হয়ে অভিভাবকরা শিশুটিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একজন পল্লী চিকিৎসক দেখান। তিনি শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে দ্রুত অক্সিজেন দিতে বলেন।

সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা ওই শিশুটিকে নিয়ে আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। কিন্তু তখনও ইমার্জেন্সিতে মেডিকেল অফিসার না থাকায় তাকে ভর্তি বা চিকিৎসা কোনোটাই দেয়া হয়নি। কর্তব্যরত উপ-সহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার মাসুদ রানাও শিশুটিকে অক্সিজেন দেননি।এ সময় অভিভাবকরা শিশুটিকে নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাসপাতালে চড়কির মতো ঘুরতে থাকেন।

কিন্তু শিশুটির ভাগ্যে চিকিৎসা বা অক্সিজেন কোনোটাই জোটেনি। বেলা ১১টার দিকে ডাক্তার দেখার আগেই সে মারা যায়। পরে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সওগাত এহসান সাম্য হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে এসে শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন।উপ-সহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার মাসুদ রানা বলেন, শিশুটির অবস্থা এতটা খারাপ ছিল তা তিনি বুঝতে পারেননি।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে চিকিৎসক সওগাত এহসান জানান, তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ডে পরিদর্শনরত ছিলেন। তাই ইমার্জেন্সি বিভাগে আসতে তার দেরি হয়। তিনি ইমার্জেন্সিতে আসার আগেই শিশুটি মারা যায়।ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হালিমা খানম বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তবে শিশুটিকে বাইরের কোনো চিকিৎসককে দেখানোর পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। তিনি ইমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।