আগে দুই দিন লাগতো, এখন দিনে গিয়ে দিনেই ফিরবো

পদ্মা সেতু চালুর ঘোষণার পর থেকে পদ্মাপাড়ে ভিড় বেড়েছে দর্শনার্থীদের। সেতু দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্তের হাজারো দর্শনার্থী পদ্মাপাড়ে ভিড় করছেন। স্বপ্নের সেতুর দুই প্রান্তে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সেতুর দক্ষিণ পাড় অর্থাৎ শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা পাড়ে গড়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। সেতু ঘিরে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই এই অঞ্চলের মানুষের। অনেকে বলছেন, আগে এই অঞ্চলের মানুষের ঢাকায় যেতে দুই দিন লাগতো। এখন দিনে গিয়ে কাজ শেষে দিনেই ফিরবেন জেলা শহরে।দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সংযোগ ঘটাবে এই সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি চালু হলে অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার

বেড়ে দাঁড়াবে ১.৫ শতাংশ। এতে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে। দারিদ্র্য বিমোচন হবে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। সেতু নির্মাণে মোট খরচ হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। সেতু চালু হলে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা। প্রবহমান প্রমত্তা পদ্মার ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে চলবে যানবাহন ও ট্রেন। আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে এই সেতু।সরেজমিনে দেখা গেছে, জাজিরার নাওডোবা ইউনিয়নের নাওডোবা গ্রামের পদ্মা নদীর পাড়ঘেঁষে বয়ে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পায়ে হেঁটে সেতু দেখতে যাচ্ছেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও এসেছেন সেতু দেখতে।

কেউ এসেছেন সপরিবারে। তবে সেতুর নিরাপত্তার স্বার্থে কাছে যেতে পারছেন না। দূর থেকে দেখে ফিরছেন দর্শনার্থীরা।সেতুর নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীরা বলছেন, পদ্মা সেতু দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসছেন। সেতু উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেতুর কাছে দর্শনার্থীদের যেতে দিচ্ছি না আমরা। মাগুরা থেকে নাওডোবা পাড়ে সেতু দেখতে আসা সুজিত সরকার বলেন, ‘১৫০ কিলোমিটার দূর থেকে সেতু দেখতে এসেছি। কাছ থেকে সেতু দেখতে পেরে ভালো লাগলো। এটি এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু।’স্বপ্নের সেতুর দুই প্রান্তে এখন উৎসবের আমেজমাগুরা থেকে আসা আরেক দর্শনার্থী সীমা সরকার বলেন, ‘২৫ জুন পদ্মা সেতু খুলবে। সেদিন প্রচুর ভিড়

থাকবে। যান চলাচল শুরু হলে স্বাভাবিকভাবে ভিড় বেড়ে যাবে। তাই আগেভাগেই দেখতে এলাম। সেতু দেখে অনেক ভালো লাগলো। আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হলো।’বরিশাল থেকে আসা জোনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘আমাকে ব্যবসায়িক কাজে প্রায়ই ঢাকা যেতে হয়। এতদিন আমরা লঞ্চে ঢাকায় যেতাম। যেতে-আসতে দুই দিন লেগে যেতো। ঢাকায় গিয়ে হোটেলে থাকতে হতো। সেতু চালু হলে দিনে গিয়ে দিনেই বরিশালে ফিরবো। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে।’খুলনা থেকে আসা কাপড় ব্যবসায়ী কাঞ্চন মিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে দ্রুত সময়ে ঢাকা থেকে মালামাল আমদানি করতে পারবো। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। তার সাহসিকতায় আজ পদ্মা সেতু হয়েছে।

আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর হয়েছে।’সেতু ঘিরে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই এই অঞ্চলের মানুষেরনড়িয়া উপজেলার সোহেল মিয়া বলেন, ‘দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেবে পদ্মা সেতু। এটি আমাদের নিজস্ব সম্পদ। ২৫ জুন সেতুটি খুলে দেওয়া হবে। তাই আগেভাগে সপরিবার সেতুটি দেখতে এসেছি।’ পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতুর চারপাশে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা আছে। এই নিরাপত্তা সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত থাকবে। মূল সেতুর ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। উদ্বোধনের আগেই ৯৯.৯৯ শতাংশ কাজ হয়ে যাবে। পাশাপাশি চলতি মাসে শেষ হবে রোড মার্কিংয়ের কাজ। ১ জুন সেতুতে আলো জ্বলবে। আমরা সেভাবেই কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।’