অল্প খরচের অক্সিজেন প্ল্যান্ট বানাল ১০ম শ্রেণির ছাত্র তারিফ

প্রায় এক বছর আগে স্কুল ছাত্র তারিফের বাবা মারা যান। মুমূর্ষু বাবার জন্য অক্সিজেন দেয়া জরুরি ছিল। কিন্তু দরিদ্র ঘরের সন্তান তারিফ বাবার জন্য কিছুই করতে পারেনি। তবে সে প্রতিজ্ঞা করেছিল স্বল্প খরচে অক্সিজেন তৈরির চেষ্টা করবে। তার সে চেষ্টা সফল হয়েছে। অল্প খরচে বাতাস থেকে অক্সিজেন উৎপাদনে প্ল্যান্ট তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারিফ।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পূর্ব টেংরি মহল্লার (বকুলের মোড়) মৃত আব্দুস সালামের ছেলে তাহের মাহমুদ তারিফ। পাবনার ঈশ্বরদীর সরকারি এস এম (সাঁড়া মরোয়ারি) মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেণির ছাত্র সে।মঙ্গলবার (৯ জুন) ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদে তারিফ তার আবিষ্কৃত প্ল্যান্টটি দিয়ে অক্সিজেন তৈরি করে দেখায়। অক্সিজেন উৎপাদন প্ল্যান্ট তৈরি করতে তার সময় লেগেছে দুই সপ্তাহ এবং খরচ হয়েছে মাত্র ৬৫ হাজার টাকা।

তাহের মাহমুদ তারিফ জানায়, ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সে তার গবেষণায় সফলতা অর্জন করেছে। তার আবিষ্কৃত প্ল্যান্টে অক্সিজেন উৎপাদন ল্যাবরেটরি টেস্টে সফল। এখন কম খরচে বৃহত্তর পরিসরে দেশে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন করার বিষয়ে সে আশাবাদী।সে আরও জানায়, এক বছরের বেশি সময় আগে তার বাবার মৃত্যুর সময় অক্সিজেন সমস্যায় পড়তে হয়। এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণে অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়ে গেছে। এসব বিষয় মাথায় নিয়েই মূলত সে কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য গবেষণায় নামে।

তার তৈরি প্ল্যান্টে অক্সিজেন উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে তারিফ জানায়, ডায়নামো দিয়ে বাতাসকে প্রথমে একটি সিলিন্ডারে প্রবেশ করানো হয়। বাতাসে অক্সিজেন ছাড়াও অন্যান্য উপাদান থাকায় সেগুলো বের করার জন্য জিওলাইট ব্যবহার করা হয়েছে। জিওলাইটের মাধ্যম বাতাস থেকে অক্সিজেনকে একদিক দিয়ে এবং অন্যান্য উপাদানকে আরেকদিক দিয়ে বের করা হয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সে কম খরচের এই প্ল্যান্ট তৈরি করেছে।

বিএমএ পাবনার সেক্রেটারি ডা. আকসাদ আল মাসুর আনন জানান, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেন স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৯৫-১০০%। এইমাত্রা ৯৩% এর কম হলে সতর্ক হতে হয় এবং ৯২%-র কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অক্সিজেন দেয়া হয়। যাদের অক্সিজেন লেভেল ৯০/৯১ এ নেমে এসেছিল, এরকম কয়েকজনকে তার প্ল্যান্টে উৎপাদিত অক্সিজেন দিয়ে এই লেভেল ৯৮-৯৯ এ ওঠানো সম্ভব হয়েছে বলে তারিফ জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব টেস্টেও সফলতা আসবে বলে সে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার বলেন, ‘তারিফের এ কাজে আমরা সবাই উৎসাহ দিয়েছি। প্রাথমিক সাফল্য এসেছে। এখন ল্যাব টেস্ট করা হবে। ল্যাব টেস্টে দেখতে হবে, তারিকের আবিষ্কৃত প্ল্যান্টে উৎপাদিত অক্সিজেনের মধ্যে বাতাসের অন্য কোনো উপাদান আছে কি-না।’এসএম (সাঁড়া মরোয়ারি) মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আয়নুল ইসলাম জানান, তারিফ অত্যন্ত মেধাবী। দরিদ্র এই শিক্ষার্থীর মেধা দেখে তারা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। বাবার মৃত্যুতে আরও অসহায় হয়ে পড়লেও সে দমে যায়নি। কম খরচে অক্সিজেন তৈরির মিনি প্ল্যান্টটিই তার অধ্যবসায়ের বড় প্রমাণ।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, ‘অক্সিজেন ঘাটতি ও এর জরুরি প্রয়োজনীয়তা মাথায় নিয়ে অল্প খরচে প্ল্যান্ট তৈরি করেছে সরকারি এস এম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ শ্র্রেণির শিক্ষার্থী তাহের মাহমুদ তারিফ। বলা যায় বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারিফ। কম খরচে প্ল্যান্ট তৈরিতে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারিফের অক্সিজেন ল্যাব পরীক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ল্যাব টেস্টে সাফল্য প্রমাণিত হলে বৃহত্তর পরিসরে বড় প্ল্যান্ট তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন দেশেই কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব হবে।’