ওসির মে’য়েকে পালিয়ে বিয়ে করে বিপাকে প্রে’মিক যুগল

রাজীব-প্রে’মা যুগলের প্রে’ম কাহিনি যেনো সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পরস্পরকে ভালোলাগা। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা।তবে তাদের এ স’ম্পর্ক পরিণয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রে’মা’র পু’লিশ অফিসার বাবা। তিনি এ স’ম্পর্ক সহ’জে মেনে নেবেন না। সেটা ভালোই জানত প্রে’মা। তাই সবাইকে গো’পন করে রাজীবের সঙ্গে বিয়েটা সেরে নেয় সে।পরে ঠিকই একসময় পু’লিশ অফিসার বাবা মে’য়ের প্রে’মের স’ম্পর্কের কথা বুঝে ফেলেন। কিন্তু বিয়ের বিষয়টি অজানাই থাকে সবার কাছে।এদিকে মে’য়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছে’লেকে পছন্দ করে জেনে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন প্রে’মা’র বাবা। মে’য়েকে বাসায় নজরব’ন্দি করে রাখেন মাসের পর মাস। যেনো যোগাযোগ না রাখতে পারে,

সেজন্য প্রে’মা’র মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন। এমনকি বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের সঙ্গেও প্রে’মা’র যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তিনি।এভাবে কে’টে যায় ৭-৮ মাস। এ সময়ের মধ‌্যে রাজীবের জন্য কা’ন্নাকাটি করেও বাবার মন গলাতে পারেনি প্রে’মা। বরং শারিরীক ও মানসিক নি’র্যাতন সইতে হয়েছে তাকে। অবশেষে বাড়ি থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রে’মা।পালিয়ে স্বামী রাজীবের বাড়িতে ঠাঁই নেয়। কিন্তু হার মানতে নারাজ তার পু’লিশ অফিসার বাবা। পরদিনই মিথ্যা অ’পহ’রণ মা’মলা ঠুকে দেন রাজীব ও তার পুরো পরিবারের নামে। এতেও ক্ষান্ত হননি ক্ষমতাধর ওই পু’লিশ ক’র্তা। বিভিন্ন সময় মে’য়ে প্রে’মা’র শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের ওপর হা’মলা চালানোরও অ’ভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রে’মা-রাজীবের সিনেমা’র মতো এমন প্রে’মকাহিনী বাস্তবে ঘটেছে ঢাকার সাভা’রে। পাশের উপজে’লা ধাম’রাইয়ের নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রে’মা উঠেছে আশুলিয়ার গকুলনগর স্বামীর বাড়িতে। তবে বাবা পু’লিশ কর্মক’র্তা মীর শাহীন শাহ পারভেজের ভ’য়ে তারা আপাতত ভাড়া বাসায় রয়েছেন। রাজীবের পরিবারের সদস্যদের অ’ভিযোগ, ওসি শাহীন পারভেজের জন্য তারা অনেকটা ব’ন্দিদশায় ও আতঙ্কের মধ‌্যে দিন পার করছেন।অ’ভিযু’ক্ত মীর শাহীন শাহ পারভেজ ঢাকা জে’লা উত্তর (সাভা’র, আশুলিয়া ও ধাম’রাই থা’না) এর ডিবি পু’লিশের ওসি হিসেবে দায়িত্বপালন শেষে সিদ্ধিরগঞ্জ থা’নায় ওসি হিসেবে যোগ দেন। পরে সেখান থেকে ক্লোজড হয়ে বর্তমানে মানিকগঞ্জ পু’লিশ লাইনে কর্ম’রত।

সামিয়া প্রে’মা বলেন, ‘‘দেড় বছর আগে আম’রা বিয়ে করেছি। আমা’র নিজের ইচ্ছায়। বাবাকে আমাদের স’ম্পর্কের কথা জানিয়েছিলাম। বাবা তারপর থেকে নানাভাবে স’ম্পর্ক ত‌্যাগের জন‌্য চাপ দিচ্ছিলেন। রাজীবের ফ্যামিলিকেও প্রেসার দেওয়া হয়েছে। আমাকেও নানাভাবে টর্চার করা হয়েছে। অনার্স কমপ্লিট হওয়ার পর আমাকে প্রায় এক বছর বাসায় আ’ট’কে রাখা হয়। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেননি। ফোন ভেঙে ফেলেছেন।গত ৩ নভেম্বর নিজের ইচ্ছায় আমা’র স্বামীর কাছে পালিয়ে আসি। এ ঘটনায় আমা’র মা বাদী হয়ে ধাম’রাই থা’নায় মা’মলা করেন। আম’র্স্বোমী, ভাসুর, শ্বশুড়-শাশুড়ির নামে মা’মলা দেওয়া হয়। পরে আমা’র ভাসুরকে পু’লিশ ধরে নিয়ে যায়। মা’মলার পর কোর্টে গিয়ে আমি নিজে জিম্মায় আমা’র স্বামীর কাছে চলে আসি। আমা’র ভাসুরকেও জামিন দেন আ’দালত।”

প্রে’মা বলেন, ‘আমা’র বাবা পু’লিশের ওসি। বাবা আশুলিয়া, সাভা’র, নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন থা’নায় ছিলেন। এখন মানিকগঞ্জ পু’লিশ লাইনে আছেন। হয়তো তার (বাবা) জিদটা বেশি কাজ করছে। এখন আমি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি। নিজের ইচ্ছায় আসছি। সংসার করছি। তারপরও যদি বাবা আমাকে জো’র করে নিতে চান, তাহলে সেটা ভুল হবে।’অ’পহ’রণ মা’মলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি বাসা থেকে যখন চলে আসছি, তখন অ’পহ’রণ মা’মলা করা হয়েছে। কিন্তু আমা’র বাবা এটা জানতেন, আমি নিজের ইচ্ছায় আসছি। আমাকে অ’পহ’রণ করা হয়নি। তারপরও তিনি মা’মলা দিয়েছেন। কোর্ট থেকে আসার পরে আমি আর বাবার সঙ্গে কনট্যাক্ট করি নাই। ফ্যামিলির কারও সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। বাবা জানার পরও এমন একটা হয়’রানি করছে এই অ’ভিমান-রাগ থেকেই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিনি।’

আলামিন রাজীব বলেন, ‘আম’রা একই ইউনিভা’র্সিটিতে একই ডিপার্টমেন্টে পড়াশুনা করতাম। সেখানে পরস্পরকে পছন্দ করি। পরে আম’রা বিয়েও করি। কিন্তু ওর কথামতো সম্মানের বিষয় ভেবে আম’রা ফ্যামিলিতে কিছু জানাইনি। ও বলে, ‘বাসায় বাবাকে আমি রাজি করাব।’ কিন্তু ওর ওপর তখন অনেক প্রেসার দেওয়া হয়। আমাকেও নানাভাবে থ্রেট দেওয়া হয়। এমনকি আমা’র বাবাকে বিভিন্ন সময় থ্রেট দেওয়া হচ্ছে। আমা’র ভাইয়ের ওপর হা’মলা করা হয়েছে। তাই আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, আমাদের পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া হোক।’

রাজীবের বড় ভাই সরকারি পশু চিকিৎসক ওম’র আলী বলেন, ‘আমি একজন সরকারি এআই কর্মী। গত ২২ নভেম্বর সকালে বাসা থেকে আমি ও আমা’র সহকারী মোটরসাইকেল নিয়ে চাকল গ্রাম যাচ্ছিলাম। সেসময় তিনটা মোটরসাইকেল ও একটা প্রাইভেট’কারে ৮-১০ জন লোক এসে আমা’র পথরোধ করার চেষ্টা করে। এসময় তারা হাতুড়ি দিয়ে আ’ঘাত করে আমাকে রাস্তায় ফেলে দেয়। পরে আমি ও আমা’র সহকারী দৌড়ে পালিয়ে যাই। আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে স’ন্ত্রাসীরা দ্রুত চলে যায়।’রাজীবের চাচাতো ভাই আসিফ মাহমুদ জানান, এসব ঘটনার পর মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজীব ভাইয়ের বাবা সিন্দুরিয়া এলাকার নিজ ফার্মেসি দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুইটা মোটরসাইকেলে চারজন দুর্বৃত্ত উনার উপর হা’মলা চালায়। একটা হোন্ডা থেকে হাতুড়ি দিয়ে চাচার মা’থায় আ’ঘাত করা হয়। এতে তিনি চি’ৎকার করে মাটিতে পড়ে যান। সেসময় আশপাশের লোকজন ছুটে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তবে যাওয়ার সময় আ’ঘা’তকারীরা আমা’র চাচাকে বলে ‘শাহিন পারভেজের মনের আশা পূর্ণ করলাম।’

তিনি আরও জানান, এছাড়া গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকার কোর্টে প্রে’মা’র বাবার দায়ের করা মা’মলার হাজিরার তারিখ ছিল। ওইদিন সন্ধ্যায় কোর্ট শেষে প্রাইভেট’কারে বাসায় ফিরছিলেন ভাই রাজীব, তার স্ত্রী’ প্রে’মা, বাবা রসুল হক, ভাই ওম’র আলী ও মাসহ পাঁচ জন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উলাইল স্ট্যান্ডের কিছুটা আগে পৌঁছলে ১৫-২০ জন লা’ঠিসোঠা নিয়ে প্রাইভেট’কারটি থামায়।ব এসময় প্রে’মাকে জো’রপূর্বক টেনে গাড়ি থেকে নামানোর চেষ্টা করে তারা। কিন্তু পেছন থেকে আসা আরেকটা গাড়িতে সাংবাদিকরা সেখানে আকস্মিক হাজির হলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।আসিফ বলেন, ‘২২ নভেম্বর চাচাতো ভাই ওম’র আলীর উপর হা’মলার ঘটনায় তারা থা’নায় অ’ভিযোগ করেন। কিন্তু এ ঘটনার সাথে জ’ড়িত স’ন্দেহভাজন ওসির নাম অ’ভিযোগে লিখতে রাজি হয়নি দায়িত্বরত পু’লিশ কর্মক’র্তা। এমন অবস্থায় তারা আইনি সহায়তা না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে দিন পার করছেন। এমনকি ইতোপূর্বে হা’মলার শিকার তার চাচাতো ভাই ওম’র আলী মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।’

এসব অ’ভিযোগ নিয়ে প্রে’মা তার বাবা ওসি মীর শাহীন শাহ পারভেজের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন (বাবা-মে’য়ের কথোপকথনের রেকর্ড আছে)। কেন মিথ্যা অ’পহ’রণ মা’মলা ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের ওপর হা’মলা করা হচ্ছে মে’য়ে প্রে’মা’র এমন প্রশ্নে ওসি শাহীন পারভেজ বলেন, ‘মা’মলা দিব না? তুমি কোথায় গেছো আমি জানব ক্যামনে? মা’মলা দিছি বিধায়তো জানতে পারছি তুমি কোথায় আছো?এসময় প্রে’মাকে মা’রধরের কথাও স্বীকার করেন ওসি। তবে প্রে’মা’র কাছে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের ওপর হা’মলার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

অ’পহ’রণ মা’মলার ত’দন্তকারী কর্মক’র্তা ধাম’রাই থা’নার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন জানান, অ’পরহণ মা’মলায় রাজীবসহ তার পরিবারের আরও চার সদস্য আ’সামি। মা’মলার পরদিন রাজীবের ভাই ওম’র ফারুককে গ্রে’প্তার করা হয়। আ’সামিরা সবাই জামিনে আছেন।
আ’দালতে ওসি শাহীন পারভেজের মে’য়ে হাজির হয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন সে ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা সম্পূর্ণ আ’দালতের। তবে সুষ্ঠু ত’দন্ত করে মা’মলার চার্জশিট দেওয়া হবে।’আশুলিয়া থা’নার ভা’রপ্রাপ্ত কর্মক’র্তা (ওসি) এসএম কাম’রুজ্জামান বলেন, ‘বৃদ্ধকে হাতুড়িপে’টা করার ঘটনায় অ’ভিযোগ দায়ের হয়েছে। অ’ভিযোগে একজন পু’লিশ কর্মক’র্তার নামও রয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও অ’ভিযোগ করেছেন। আম’রা বিষয়টি ত’দন্ত করে দেখছি।’