হেফাজতে থাকছেন আউয়াল, দেখা করে জানালেন মামুনুল

নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সংগঠনের নায়েবে আমির আবদুল আউয়ালের সঙ্গে দেখা করেছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। এরপর তিনি বলেছেন, আবদুল আউয়াল পদত্যাগের সিদ্ধান্ত বদলেছেন, হেফাজতের সঙ্গে আগের মতোই থাকবেন তিনি।হরতালে সহিংসতায় ক্ষুব্ধ হয়ে হেফাজতে ইসলামের সব পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আবদুল আউয়াল। তিনি কেন্দ্রীয় নায়েব আমিরের পদে থাকার পাশাপাশি হেফাজতের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আমিরের পদেও রয়েছেন।

আবদুল আউয়ালের ঘোষণায় তুমুল আলোচনার মধ্যে আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জে উপস্থিত হন মামুনুল হকসহ হেফাজতের কেন্দ্রীয় চার নেতা। তাঁরা বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় রেলওয়ে জামে মসজিদে আবদুল আউয়ালের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।এরপর সাংবাদিকদের সামনে এসে মামুনুল হক বলেন, ‘আবদুল আউয়াল আগের মতো হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও নারায়ণগঞ্জে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে মাঠে–ময়দানে থেকে তিনি আগের মতো নেতৃত্ব দেবেন। পদত্যাগের যে ঘোষণা তিনি দিয়েছেন, তা তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে আমাদের যে কর্মসূচি আছে, তিনি সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে তা পালন করবেন বলে জানিয়েছেন।’

আবদুল আউয়াল এ সময় সাংবাদিকদের সামনে আসেননি। তাঁর মুঠোফোনে কল করলে তাঁর খাদেম মাহাদী হাসান তা ধরে বলেন, ‘আউয়াল সাহেব নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটিই তাঁর সিদ্ধান্ত।’আউয়ালের বিষয়ে মামুনুল বলেন, ‘হুজুরের (আউয়াল) মাঝে কিছু মান–অভিমানে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল, তা আমাদের অনুরোধে এবং আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়ে গেছে।’হরতালে সহিংসতা প্রসঙ্গে মামুনুল বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কোনো অরাজকতা বা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নয়। হেফাজতের নেতা–কর্মীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের অবস্থানে কোথাও কোনো ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। যে সহিংসতা হয়েছে আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

সাংবাদিকদের মারধরের প্রশ্নের জবাবে মামুনুল বলেন, হেফাজত জড়িত থাকতে পারে না। কোথাও কেথাও ভুল–বোঝাবুঝি হয়ে থাকতে পারে। কারণ, হেফাজতে ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের সম্মান করে। তবে হেফাজতের মাঠপর্যায়ের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হতে পারে, অথবা চলাচলে ভুল হতে পারে। কিন্তু হেফাজতের কোনো দায়িত্বশীল নেতা সাংবাদিকদের মারধর করেননি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মামুনুল বলেন, সহিংসতা হেফাজতে ইসলাম করেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে সহিংসতা হয়েছে, সেটা হলো সেখানে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী ‘সেন্টিমেন্টাল’ থাকতে পারে। কিন্তু এর জন্য হেফাজতে ইসলাম দায় কেন নেবে? মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হেফাজত সহিংসতা করেনি। মামলা যেহেতু হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সভাপতি জোনায়েদ আল হাবীব, যুগ্ম মহাসচিব ফজলুর করিম, অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন কাসেমী। জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুফতি বশির উল্লাহ, মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি ফেরদাউসুর রহমানসহ সংগঠনের নেতা–কর্মীরা।

গত রোববারের ডাকা হরতালে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-হেফাজতের দফায় দফায় সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ ছাড়াও পুলিশ-সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ১৮টি গাড়ি। ভাঙচুর করা হয়েছে দুটি গণমাধ্যমের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সসহ শতাধিক যানবাহন। ওই দিন সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা অচল হয়ে ছিল। তার পরদিন শবে বরাতের বয়ানে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আবদুল আউয়াল।